তানজিমের শ্বাসনালি পুড়েছে, এক চোখ ও কান গলে গেছে

তানজিম আক্তার
তানজিম আক্তার

ভোলার অ্যাসিডদগ্ধ তানজিম আক্তারের (মালা) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার বোন সাত বছর বয়সী মারজিয়ার অবস্থা উন্নতির দিকে। তার ক্ষত কিছুটা শুকিয়ে এসেছে।

গত ১৪ মে দিবাগত রাত দুইটার দিকে ভোলায় উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে রাঢ়ী বাড়িতে রাতে ঘুমের মধ্যে এই দুই বোন একসঙ্গে অ্যাসিড দগ্ধ হয়। মেয়েদের চিৎকারে ছুটে গিয়ে তাদের ধরলে মা জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতও অ্যাসিডে দগ্ধ হয়।

এসএসসি পাস তানজিম আক্তার এখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর মুখোমুখি। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক চোখ, এক কান ও নাকের খানিকটা অংশ গলে গেছে। আরেক চোখের অবস্থাও ভালো নয়। মুখ থেকে বুকের নিচ পর্যন্ত গভীরভাবে দগ্ধ হয়েছে তার।

রাজধানীর মিরপুরে অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ) হাসপাতালে মারজিয়ার চিকিৎসা চলছে। তার মাথা, পিঠ ও বুক থেকে ঊরু পর্যন্ত দগ্ধ হয়। তানজিম আক্তারকেও (১৬) প্রথমে এএসএফের হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং সেখান থেকে আবার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ভোলা ও বরিশালে তাদের চিকিৎসা হয়।

এএসএফের হাসপাতালের চিকিৎসক ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, তানজিমের শ্বাসনালিসহ শরীরের ২৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। জন্ডিসসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। ১২ শতাংশ দগ্ধ হওয়া মারজিয়ার অবস্থা ভালোর দিকে।

তানজিম আক্তার ও মারজিয়ার বাবা মো. হেলাল রাঢ়ী চট্টগ্রামে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ভোলায় থাকেন। তানজিম ভোলা থেকে এসএসসি পাস করে। কলেজে ভর্তির আগেই সে অ্যাসিডদগ্ধ হয়।

এএসএফ হাসপাতালে বসে কথা হয় তানজিম ও মারজিয়ার মা ও বাবার সঙ্গে। তাঁরা দুই হাসপাতালে দুই মেয়ের দেখভালের জন্য ছোটাছুটি করছেন। তাঁদের বক্তব্য এবং মামলার নথি অনুযায়ী তানজিমের মুঠোফোনে রং নম্বরের মাধ্যমে মহব্বত হাওলাদার (১৯) নামের একজনের পরিচয় হয় দুই মাস আগে। সে তানজিমের ভালো-মন্দের খোঁজ নিত। তানজিম কোন কলেজে ভর্তি হবে, তা নিয়ে ওদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগে। তানজিমের সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের প্রেমের সম্পর্ক আছে, মূলত এ সন্দেহের কারণেই মহব্বত অ্যাসিড মারেন। সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তারের পর গত ২৬ মে মহব্বত হাওলাদার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে অ্যাসিড মারার কথা স্বীকারও করেছেন। এখন তিনি কারাগারে আছেন।

ঘটনার পর ১৫ মে ভোলা সদর মডেল থানায় তানজিম ও মারজিয়ার মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে অন্যদের আসামি করা হয়েছিল।

ভোলা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) এবং এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এএসএফের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ বলেন, ব্র্যাকের সহায়তায় তানজিম ও মারজিয়াকে এএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ মে থেকে এই দুজনের চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে এএসএফ। তিনি বলেন, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় করা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে না হয়ে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য সহযোগিতা পাওয়া সহজ হতো।

এই অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় গত ১৭ মে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বন্ধুসভা মানববন্ধন করে। ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক প্রথম আলোর ভোলা প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, জেলায় অ্যাসিড ব্যবহারকারীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাঁদের লাইসেন্স নেই, তাঁদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান চালানো হবে।