নারীদের এগিয়ে নেওয়াই লক্ষ্য

অতিথিদের সঙ্গে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি পাওয়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ১৬ মেধাবী ছাত্রী। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে।  ছবি: সৌরভ দাশ
অতিথিদের সঙ্গে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি পাওয়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ১৬ মেধাবী ছাত্রী। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে। ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের রাউজানের বড় ঠাকুরপাড়ায় বড় হওয়া সামিনা জামান দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। এরপরই শুরু হয় মায়ের সঙ্গে তাঁর সংগ্রাম। বড় হতে হতে দেখেন এসএসসি পরীক্ষার আগে কিংবা পরীক্ষার পরপরই আশপাশের মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে। সেই পরিবেশ থেকে উঠে এসে তিনি এখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ছেন। তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট।

আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পাওয়া এমন ১৬ ‘অদ্বিতীয়া’কে গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কে অবস্থিত এইউডব্লিউর ক্যাম্পাস মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাঁরা সবাই পরিবারের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

নারীর ক্ষমতায়নে প্রথম আলোর প্রবল সমর্থন রয়েছে উল্লেখ করে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন দিনের পর দিন আরও বাড়বে। তারা সবক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে, অনেক দূর যাবে।’

বৃত্তি পাওয়া এইউডব্লিউর শিক্ষার্থীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘নারীদের এগিয়ে নেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

২০০৮ সালে চালু হওয়া এইউডব্লিউ বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় পাওয়া বলে মন্তব্য করেন প্রথম আলো সম্পাদক। এ জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমাদকে ধন্যবাদ জানান।

প্রথম আলো সম্পাদক তাঁর বক্তব্যে প্রথম আলোর নানা উদ্যোগ ও সফলতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথম আলো ২০ বছর পার করতে যাচ্ছে। ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে (এনএমএস বা জাতীয় প্রচারমাধ্যম জরিপ) অনুযায়ী এখন ছাপা পত্রিকা ও অনলাইন মিলিয়ে ৭৬ লাখ পাঠক প্রতিদিন প্রথম আলো পড়ছেন। প্রথম আলো স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকে প্রতিবছর এক শর বেশি শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি দেওয়া হয় বলে জানান মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে অ্যাসিড সন্ত্রাস প্রতিরোধে কাজ করে আসছে প্রথম আলো। ওই সময় বছরে ৪৮৪ জন অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।

আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সমাজের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। এই চিন্তা থেকেই প্রথম আলো ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত হই।’ তিনি বলেন, বৃত্তি পাওয়া ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে।

এইউডব্লিউর পরিচালক (ভর্তি) রেহেনা আলম খান বলেন, প্রথম আলো ট্রাস্ট এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে। তাঁরা জীবনে সাফল্য পেয়েছেন।

>বৃত্তিপ্রাপ্ত ১৬ শিক্ষার্থী পরিবারের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ছয় বরেণ্য ব্যক্তিকে মঞ্চে ডেকে নেন প্রথম আলো সম্পাদক। ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, প্রথম আলো অনেক বড় কাজ করছে। এই উদ্যোগ তার একটি অংশ। প্রকাশের পর থেকেই প্রথম আলো বলতে গেলে অদ্বিতীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ও অদ্বিতীয়। কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, এইউডব্লিউর শিক্ষার্থীরা একজন আরেকজনের সহায়ক হবেন, এটাই প্রত্যাশা। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা করেন নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন। শিক্ষাবিদ সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, এইউডব্লিউতে পড়ে শিক্ষার্থীরা নানা সংস্কৃতি সম্পকে জানবে—এটাই প্রত্যাশা। আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, চেষ্টা করলে সবকিছু সম্ভব। সব সক্ষমতা কাজে লাগালে—কখনো পিছিয়ে পড়বে না। শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া বলেন, যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো। ছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়ার উদ্যোগ তাই প্রমাণ করে।

বৃত্তিপ্রাপ্ত ১৬ ছাত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের একাংশ।  ছবি: প্রথম আলো
বৃত্তিপ্রাপ্ত ১৬ ছাত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের একাংশ। ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ‘সাত সাহসী’, আইডিএলসি ও এইউডব্লিউর তিনটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

গত দুই বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৬ শিক্ষার্থী আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট বৃত্তি পেয়েছেন। গতকালের অনুষ্ঠানে এই ছাত্রীদের হাতে সনদ তুলে দেন অতিথিরা। অনুভূতি প্রকাশ করেন তিন ছাত্রী সামিয়া জামান, জাহিদা আক্তার ও মোহিনী আফরোজ। তাঁরা নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডেভ ডোল্যান্ডের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।