এগিয়ে যাবে মাদকবিরোধী আন্দোলন

প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার’ ১০০তম অনুষ্ঠানে অতিথিরা হাত তুলে মাদককে ‘না’ বলেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার’ ১০০তম অনুষ্ঠানে অতিথিরা হাত তুলে মাদককে ‘না’ বলেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। ছবি: প্রথম আলো

শততম পরামর্শ সভার মধ্য দিয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলন একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে। তবে এখানেই থামছে না এই আন্দোলন। আরও বড় পরিসরে, নতুন উদ্যমে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেবে প্রথম আলো ট্রাস্ট।

প্রথম আলো ট্রাস্টের অধীনে ১৫ বছর ধরে মাদকবিরোধী আন্দোলন চলে আসছে। এর অংশ হিসেবে ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে নিয়মিত আয়োজন করা হয় পরামর্শ সভা। গতকাল শুক্রবার ধানমন্ডি লেকের পাশে রবীন্দ্রসরোবরের মঞ্চে আয়োজন করা হয় শততম পরামর্শ সভার। বিশেষ এই পরামর্শ সভায় মাদকবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

শুরুতেই উপস্থিত দর্শকদের সামনে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শ সভার কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আজিজা আহমেদ।

এরপরই মঞ্চে আসে এবিসি রেডিওর ইনহাউস ব্যান্ড আয়না। তারা গেয়ে শোনায় ‘আলোয় ভুবন ভরা’, ‘আমার সোনার হরিণ চাই’ গান দুটি। মাদকাসক্তি থেকে নিরাময় বিষয়ে পরামর্শ দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, মাদকাসক্ত হলে তা থেকে বের হয়ে আসা যায় না, এটি ঠিক নয়। মনোবল ও ইচ্ছা থাকলে মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।

বিশেষ এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা হলেন ডা. মোহিত কামাল, ডা. মেখলা সরকার, ডা. ফাতেমা মারিয়া খান, ডা. ফারজানা রহমান ও ডা. জোবায়ের মিয়া। তাঁদের নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পর্ব পরিচালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক।

দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে মোহিত কামাল বলেন, সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের খোলামেলা কথা বলতে হবে। সন্তান কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে।

এ পর্যায়ে আনিসুল হক মঞ্চে ডেকে নেন অতিথিদের। মঞ্চে আসেন বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সদস্য রূপালী চৌধুরী, অভিনেতা আফজাল হোসেন, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস।

ইমদাদুল হক তাঁর বন্ধু আফজাল হোসেনের অনুপ্রেরণায় কীভাবে ধূমপান ছেড়েছেন, সেই গল্প শোনান। তিনি বলেন, মাদক থেকে দূরে থাকতে নিজেকে ভালোবাসুন, আর কিছু লাগবে না।

সবাই একসঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে একসময় বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রূপালী চৌধুরী।

মাদকাসক্ত জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্প শোনান রাকেশ ভৌমিক ও সুমাইয়া রহমান। প্রথম আলোর পরামর্শ সভায় অংশ নিয়ে কীভাবে নিজের ছেলেকে মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে এনেছেন, তা বলেন শাহিনুর সুলতানা।

সুমাইয়া রহমান বলে, ‘গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় কৌতূহলের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে ধূমপান শুরু করি। তারপর ইয়াবা ও গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়ি। সাড়ে ছয় মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন আমি সুস্থ।’

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের নতুন লোগো উন্মোচন করেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়, সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই। নতুন লোগো নিয়ে, নতুন উদ্যমে মাদকবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিতে চাই।’

অনুষ্ঠানে জাদু পরিবেশন করেন রাজীব বসাক। সংগীত পরিবেশন করেন সজীব। আয়োজন শেষ হয় জলের গানের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের সম্প্রচার সহযোগী ছিল নাগরিক টিভি।