মাদককে আমি ঘৃণা করি

ব্যক্তিগত ছোট ছোট সমস্যা থেকে প্রথমে মাদকের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। ১৯৯৬ সালের দিকে স্কুলে থাকা অবস্থায় অল্প অল্প মাদক নেওয়া শুরু করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ২০০২ সালের দিকে ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ি। মধ্যে আমি অনেকবারেই নিজে নিজে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অন্ধকার জগতের প্রতি একধরনের আকর্ষণ ছিল আমার। ২০০৬ সালে এসে আমি পুরোপুরি ফেনসিডিল ছাড়তে পেরেছি। আবার ২০০৯ সালে এসে ইয়াবায় আসক্ত হই। ইয়াবাতে আসক্ত হওয়ার পর আমি ২০১১, ২০১২ ও ২০১৪ সালে চিকিৎসা করাই। এর মধ্যে আমি ২০১৩ সালে পুরোটাই মাদকমুক্ত ছিলাম। ২০১৪ সালের মে মাসে ইয়াবায় আসক্ত হলেও আগস্ট মাসে নিজে নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিজে নিজে চেষ্টা করে বারবার আমি মাদক ছেড়েছি। কিন্তু বেশি দিন মাদকের বাইরে থাকতে পারিনি। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আবার চিকিৎসা করি। এরপর অনেক দিন কেটে যাওয়ার পর ২০১৮ সালে আবার চিকিৎসা করাই। আমি মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য নিজে নিজে চেষ্টা করছি। বেশ কয়েকবার চিকিৎসাও করিয়েছি। কিন্তু বারবার আমি মাদকের নেশার মধ্যে পড়ে যেতাম। রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলন প্রতি মাসে মাদকবিরোধী পরামর্শ–সহায়তাও আমাকে মাদক ছেড়ে দিতে সাহায্য করেছে।

এ বছর চিকিৎসা করে এসেছি। এখন পর্যন্ত খুবই ভালো আছি। আশা করি, থাকতে পারব। অতীতে বেশি সময় মাদক থেকে দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা ধরে রাখতে পারিনি। নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে মাদক থেকে দূরে থেকেছি। চিকিৎসা করার পরও অনেক দিন মাদক থেকে দূরে থাকতে পারতাম। ওই সময়গুলো নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যেত, অনেক বেশি ভয় লাগত।

প্রতিবার পরিবার, বন্ধুদের কথা চিন্তা করে ফিরে আসতাম। মাদক আমার কাছে কোনো সময়ই ভালো লাগত না। মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমার অন্য সমস্যাগুলো আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম। কিন্তু এদের সঙ্গে মিশলেই নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না।

মাদক গ্রহণ করা সমাজের সবচেয়ে খারাপ কাজ। কিন্তু একজন মাদকাসক্ত তৈরি হওয়ার পেছনে সমাজেরও দায় রয়েছে। আমাদের সমাজে মাদক অনেক বেশি সহজলভ্য। কেউ চাইলেই মাদকের উপকরণগুলো কিনতে পারছে এবং সহজেই মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারছে।

মাদক একজন মানুষের ভালো গুণাবলি নষ্ট করে দেয়। পরিবারের একজন সদস্য যদি মাদকাসক্ত হয়, তাহলে তার পরিবারে এর প্রভাব পড়ে। ভালো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। তাই মাদককে আমি ঘৃণা করি।

লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক