নাটোরের শাকিল শাওন ইমন। ভূমিহীন মা-বাবার একমাত্র সন্তান। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা আব্দুল কুদ্দুস মৃধা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। মা ছাবিয়া বেগম মাত্র ১২ শত টাকা মাসিক বেতনে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। আগে থেকেই নেই নানা-নানি ও দাদা-দাদী। দেখারও কেউ নেই। একটি মাত্র ছোট্ট ছাপড়াঘরে বসবাস করেন মা আর ছেলে। সেখান থেকেই পড়াশোনা করে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় নাটোরের পাটগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে শাকিল। ভবিষ্যতে সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।
মাগুরার জুইভা ইসলাম। তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, হারিকেনের আলোই ভরসা। বাবা রাজিব হোসেন মল্লিক বাসশ্রমিক। অন্যের জায়গায় কোন রকম কুঁড়ে ঘর করে থাকেন। জুইভার মা-ও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। সে-ও এসএসসি পরীক্ষায় সেরা সাফল্য পেয়েছে। শাকিল, জুইভাসহ আট অদম্য মেধাবীকে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া হলো শিক্ষাবৃত্তি।
ঢাকার এক চিকিৎসক দম্পতির সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট-অদম্য মেধাবী তহবিল তাদের এই শিক্ষাবৃত্তি দেবে। এই উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে তাদের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃত্তি প্রাপ্ত অন্যরা হলো রংপুর বদরগঞ্জের তারিনা খাতুন, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ভদ্রকোল গ্রামের কবির হোসেন, শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী গ্রামের মোন্নাফ শেখ, নাটোর সদর উপজেলার আগদীঘা গ্রামের মামুন হোসেন, সিংড়ার নুসরাত হাসান, সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের হাড়িগাছা গ্রামের মো.হৃদয় আলী । এরা সবাই ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নুসরাত হাসানের খালা মুন্নী বেগম জানালেন, তারিনের বাবা নেই মা খুবই অসুস্থ তাই ঢাকায় আমি নিয়ে এলাম। এই বৃত্তি পাওয়ায় নুসরাতের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া যাবে। ভাগনির জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।
কৈজুরী গ্রামের মোন্নাফ শেখের বাবা বাবু শেখ জানালেন, তিনি পেশায় একজন তাঁত শ্রমিক। মোন্নাফ নিজেও কখনো দিনমজুরগিরি করেছে কখনো মাটি কাটার শ্রমিকও ছিল, লেখাপড়া করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাড়ি ঘর ভেঙে যাওয়ায় এখন তারা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে সহায়তাকারী চিকিৎসক দম্পতি, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীনসহ ট্রাস্টের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
অদম্য মেধাবী তহবিলের আওতায় এখন পর্যন্ত মোট ৮৫০ জন শিক্ষার্থী বৃত্তিসহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২জন, মেডিকেলের ২১ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ জন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১ জন ও দরিদ্র কোটায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭জন শিক্ষার্থী আছেন। এদের মধ্য ৫৮ জন অদম্য বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেছেন।