গাইবান্ধায় কম্বল বিতরণ

প্রথম আলো ট্রাষ্টের উদ্যোগে  গাইবান্ধায় কম্বল বিতরণ।
প্রথম আলো ট্রাষ্টের উদ্যোগে গাইবান্ধায় কম্বল বিতরণ।

প্রথম আলো ট্রাষ্টের উদ্যোগে গত ১২ জানুয়ারি  শনিবার গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে ২০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে দুপুর ১২ টায় সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়টির ১৫০ জন সাধারণ ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে একটি করে কম্বল দেওয়া হয়। বন্ধুসভার সদস্যরা গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেন। 

কম্বল বিতরণ পুর্ববর্তী এক আলোচনা সভা বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নলডাঙ্গা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামছুল হক। বক্তব্য দেন, নলডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম, প্রভাষক মো. আবুল কাসেম ও শহিদুল ইসলাম, নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান তরিকুল ইসলাম, নলডাঙ্গা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা  মো. আবদুর রকিব সরকার, নলডাঙ্গার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাকিব মন্ডল, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. গোলাম ফারুক, স্থানীয় সমাজকর্মী আলহাজ্ব গোলজার হোসেন, গাইবান্ধা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আবুল আল-মুনছুর পলাশ, গাইবান্ধা বন্ধুসভার সহ-সভাপতি হারেজ উদ্দিন জিলাদার, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, প্রচার সম্পাদক মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিল্লাত হোসাইন, উপ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাঈম ইসলাম, সদস্য এরশাদ আরী প্রমুখ। 

প্রথম আলো ট্রাষ্টের উদ্যোগে  গাইবান্ধায় কম্বল বিতরণ।
প্রথম আলো ট্রাষ্টের উদ্যোগে গাইবান্ধায় কম্বল বিতরণ।

নলডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, দেশে অনেক পত্রিকা রয়েছে। এরমধ্যে কেবল প্রথম আলোকে সামাজিক কাজ করতে দেখছি। মানবিক মুল্যবোধ থেকেই পত্রিকাটির কর্মীরা এবং বন্ধুসভার সদস্যরা স্বেচ্ছায় এসব কাজ করছেন। তাদের এসব দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে অন্যদেরকেও এগিয়ে আসা উচিত। নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলো শুধু খবর পরিবেশন করে না, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে। তাদের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। গাইবান্ধা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আবুল আল-মুনছুর বলেন, সামাজিক কাজ ছাড়াও প্রথম আলো গণিত উৎসব, ভাষা প্রতিযোগসহ বিভিন্ন কর্মসুচি করে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে কাজ করছে। কম্বল পেয়ে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র প্রতিবন্ধী কামরুল হাসান জানায়, আমাদের বাড়িতে কম্বল ছিল না। আমরা কাথা গায়ে দিয়ে থাকতাম। আজ কম্বল পেয়ে ভালো হলো। একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির রুহুল আমিন জানায়, রাতে দুইটি কাথা একখানে করে মার সাথে ঘুমাতাম। তারপরও শীত লাগত। আপনারা প্রথম আলোর কম্বল দিলেন। আজকে আরাম করে ঘুমাবো। একই শ্রেণির মৌসুমী আক্তার জানায়, আমাদের বাড়িতে লেপ নেই। ঘুমাতে কষ্ট হতো। প্রথম আলোর কম্বল পেয়ে ভালো লাগছে। তৃতীয় শ্রেণির শাপলা আক্তার জানায়, স্যার আমি খুসি হচি, আজ নতুন কম্বল গায়ে দিয়ে থাকবো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামছুল হক বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক ১১ জন ও ছাত্রছাত্রী ২২০ জন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। অনেকের শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ নেই। এমন শিক্ষার্থীরাই আজ প্রথম আলোর কম্বল পেল। এ জন্য আমরা প্রথম আলোর কাছে কৃতজ্ঞ। বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক হারুণ-অর-রশিদ বলেন, ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর আজই প্রথম কম্বল পেল শিক্ষার্থীরা।

বিকেলে বন্ধুসভার সদস্যরা ঘুরে ঘুরে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রতাপ গ্রামের ৫০ জন বয়স্ক নারী-পুরুষের প্রত্যেককে একটি করে কম্বল দেন। কম্বল পেয়ে প্রতাপ গ্রামের ৭০ বছর বয়স্ক আজিরন নেছা নিজের ভাষায় বললেন, ‘নাখায়া এ্যাকবেলা থাকান যায়, কিনতো শিতের কসেটে আইতোত হামরা ঘুমব্যার পাইনে। এব্যারক্যা শিতোত কাউয়ো হামাক শিতের কাপড়া দ্যায় নাই। তোমার ঘরে পোত্তোম আলোর কমবোল কোনা পায়া উপক্যার হলো বাবা’। একই গ্রামের দিনমজুর দসিজল হক (৬৫) বললেন, ‘খালি শুনি থাকি কমবোল দ্যায়, কিনতো হামরা আজো এ্যাকনা কমবোল পানো না। তোমরা কোন কারা  বাবা হামাক কমবোল দিলেন’। প্রথম আলো থেকে কম্বল দেওয়া হলো বলে জানালে, তিনি বললেন, আল্লাহ তোমারঘর পেপারের ভালো করুক বাবা’। 

প্রথম আলো ট্রাষ্টরে উদ্যোগে শনিবার গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে ২০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়।