সুন্দর আগামীর স্বপ্ন তাঁদের

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সমাবর্তনে প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পাওয়া সাত শিক্ষার্থীর চয়জন। গতকাল চট্টগ্রামের একটি হোটেলে।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সমাবর্তনে প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পাওয়া সাত শিক্ষার্থীর চয়জন। গতকাল চট্টগ্রামের একটি হোটেলে।

প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি নিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে নাসরিন সুলতানা। এই বৃত্তি তাঁর ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছে। আগামী দিনে তাঁর অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে প্রথমেই এগিয়ে আসবেন শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য। সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত আর্থিকভাবে সহায়তা করে যাবেন শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণের জন্য নাসরিন ভর্তি হয়েছিলেন এইউডব্লিউতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা এই ছাত্রীর স্বপ্নপূরণে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রথম আলো ট্রাস্ট। পেয়েছিলেন ‘এইউডব্লিউ-প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’।

এই বৃত্তি পাওয়া সাত ছাত্রী এবার এইউডব্লিউ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সমাবর্তনে ছয় ছাত্রী অংশ নিলেও উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া অবস্থান করায় অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন না মাহিম রোকেয়া। বৃত্তি পাওয়া নাসরিন ও মাহিম ছাড়া অন্য পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন ইশরাত জাহান, দিলুফা তুজ জেরিন, জান্নাতুল ফেরদৌস মুনমুন, নাফিসা তুনাজ্জিন ও নুসরাত সুমাইয়া।

প্রথম আলো ট্রাস্টের মাসিক বৃত্তি শিক্ষাজীবনে খুব কাজে এসেছে বলে জানান নাসরিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃত্তি পাওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তেমন কোনো আর্থিক চাপ অনুভব করেননি। খণ্ডকালীন চাকরিতেও তেমন সময় দিতে হয়নি। এর পরিবর্তে পড়াশোনায় সময় দিয়েছেন।

স্নাতকোত্তর করার জন্য এখন বাইরের দেশে আবেদন করেছেন নাসরিন। পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। কূটনৈতিক পেশায় কাজ করার স্বপ্ন আছে এই ছাত্রীর। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ভবিষ্যতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছেন তিনি, যেখানে তরুণ-তরুণীদের যুক্ত করবেন।

বৃত্তি পাওয়া চট্টগ্রামের আরেক মেয়ে ইশরাত জাহানের স্কুল-কলেজ ছিল সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বৃত্তির টাকা শুধু নিজের পড়াশোনায় খরচ করেছেন তেমন নয়, ছোট বোনকেও দিয়েছেন তার একটা অংশ। দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা আছে তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ইশরাতের।

দিলুফা তুজ জেরিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু কোনোভাবে সেটি সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এমন সময় তিনি জানতে পারেন প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তির কথা। আবেদন করতেই মেলে বৃত্তি। কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা এই শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলো ট্রাস্টের এই বৃত্তি তাঁকে স্বাবলম্বী করেছে। বৃত্তির কারণে মা-বাবার ওপর নির্ভরতা কমেছে। এতেই তিনি অনেক খুশি।

পাবলিক হেলথ (জনস্বাস্থ্য) বিষয়ে স্নাতক পাস করা দিলুফা তুজ জেরিন ভবিষ্যতে কাজ করতে চান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়। নিতে চান উচ্চতর ডিগ্রি।

বৃত্তি পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসও পাবলিক হেলথ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁরও ভবিষ্যৎ ইচ্ছা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ করার। বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে ফিরতে চান দেশে। এরপর কাজ করতে চান দেশের মানুষের কল্যাণে। চট্টগ্রামের মেয়ে নাফিসা তুনাজ্জিনের বেড়ে ওঠা এই শহরেই। চট্টগ্রাম রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর এইউডব্লিউতে ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থীও প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পেয়েছেন। অর্থনীতি বিষয় নিয়ে স্নাতক করা এই শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে কানাডা যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। সেখানকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে চান।

২০১৭ সাল থেকে এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় আইডিএলসি। ‘আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট’ অদ্বিতীয়া প্রকল্প নামে বর্তমানে প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩৪ জন বৃত্তি পাচ্ছেন এবং এ পর্যন্ত মোট ৫৮ জন বৃত্তি পেয়েছেন।

সূত্র: প্রথম আলো প্রিন্ট সংস্করণ, ১২ মে ২০১৯।