কথা-ছন্দ-গানে অদম্য মেধাবীদের এক বেলা

এইচএসসি পর্যায়ে বৃত্তি পেয়ে সংবর্ধনা পাওয়া অদম্য শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো।
এইচএসসি পর্যায়ে বৃত্তি পেয়ে সংবর্ধনা পাওয়া অদম্য শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো।

কিশোর আলো কীভাবে পাওয়া যাবে, সে পথ বাতলে বক্তব্য শুরু করলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। অদম্য মেধাবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জীবনের কাহিনি শুনতে শুনতে আমি কাঁদছিলাম। আমার পাশের অনেকেই কাঁদছিল। তোমরাই বাংলাদেশ। তোমরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জয় ছিনিয়ে এনেছ।’

অনুষ্ঠানে জীবনের গল্প শোনান ছয় শিক্ষার্থী। (বাঁ থেকে) মো. সাইফুদ্দিন রাফি, মুক্তা দাস, শাহিনা সুলতানা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, পারভেজ মোশারফ, এনামুল হক। ছবি: প্রথম আলো।
অনুষ্ঠানে জীবনের গল্প শোনান ছয় শিক্ষার্থী। (বাঁ থেকে) মো. সাইফুদ্দিন রাফি, মুক্তা দাস, শাহিনা সুলতানা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, পারভেজ মোশারফ, এনামুল হক। ছবি: প্রথম আলো।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব এভাবেই শুরু হয়। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, অদম্য মেধাবীদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। কেউ কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধী। তা সত্ত্বেও তারা সবাই জিপিএ-৫ পায়, যা অনুপ্রাণিত করে, আশা জোগায়।

আনিসুল হক ছন্দ-উপমায় একে একে মঞ্চে ডেকে তোলেন ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস, অভিনেতা সিয়াম আহমেদ ও টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোক্তা আয়মান সাদিককে।

অদম্য মেধাবীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস। এ ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করার জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান। শাহরিয়ার বলেন, ১০০, ৫০০ টাকার জন্য কত ছাত্র পড়তে পারছে না। সন্তানের পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে মা বাসায় কাজ করছেন বা শেষ সম্বল কানের দুলটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিন্তু একটু সহায়তা তাদের এ পথচলা মসৃণ করে দেয়।

গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সংগ্রামের কথা শুনতে হাজির হয়েছিল শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শহুরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শাহরিয়ার বলেন, ‘তোমরা আইফোন চাও। আর ওরা পড়তে পারে না। ওদের সংগ্রাম তোমাদের বুঝতে হবে।’

মেধাবী ও অদম্য মেধাবীর মধ্যে পার্থক্য টেনে অভিনেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্লাস শেষে আড্ডা দিতাম। কিন্তু এক বন্ধু কখনোই সে আড্ডায় যোগ দিত না। এ নিয়ে মন খারাপ হতো। একদিন খুব চেপে ধরলে বন্ধুটি জানাল, প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচের পাশাপাশি সংসারও চালাতে হয়। তাই ক্লাসের বাইরে তার হাতে কোনো সময় থাকে না।’

সেই বন্ধু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উল্লেখ করে সিয়াম বলেন, মানসিক ইচ্ছা থাকলে এবং মেধার প্রকৃত ব্যবহার করা গেলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। বক্তব্য শেষে তাহসানের ‘আলো’ গানটি ধরেন সিয়াম। এ সময় সিয়ামের সঙ্গে গলা মেলান শিক্ষার্থী ও অতিথিরা।

নিজে কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সংগ্রামের বর্ণনা দিয়ে টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোক্তা আয়মন সাদিক বলেন, ভর্তি কোচিংয়ে প্রথম তিনটি ক্লাস বিনা মূল্যে করা যায়। পরের ক্লাসগুলো করতে কোচিং ফি দিতে হয়। সেটি দিতে না পেরে অনেকেরই ক্লাস করা হয় না।

এরপর জাদু নিয়ে মঞ্চে আসেন জাদুকর রাজীব বসাক। তাঁর জাদু দেখে মুগ্ধ হন শিক্ষার্থীরা। সবশেষে ছিল চিরকুটের পরিবেশনা। ‘কানামাছি মিথ্যা, কানামাছি সত্য’ গান শুনতে শুনতে হল ছাড়েন অদম্য মেধাবীরা।

সূত্র: প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে ৪ অক্টোবর, ২০১৯