'আমরা সবাই অদ্বিতীয়া'

অদ্বিতীয়া বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে (ওপরে বাঁ থেকে তৃতীয়) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের পরিচালক (ভর্তি) রেহেনা খান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান এবং এইউডব্লিউর রেজিস্ট্রার ডেভ ডোল্যান্ড। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
অদ্বিতীয়া বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে (ওপরে বাঁ থেকে তৃতীয়) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের পরিচালক (ভর্তি) রেহেনা খান, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান এবং এইউডব্লিউর রেজিস্ট্রার ডেভ ডোল্যান্ড। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

তমা বর্মার বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজারের এক চা–বাগানে। একদিকে চা–শ্রমিকের পরিবার, অন্যদিকে সেখানে নারী মানেই যেন অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া। এ রকম একটি এলাকা থেকে উঠে এসে তিনি এখন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়—এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যখন কীভাবে নিজের খরচ জোগাবেন—এমন শঙ্কা ডালপালা মেলতে শুরু করেছিল মনে, তখন মিলেছে এইউডব্লিউ-আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া বৃত্তি’ও। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন অন্যদের এগিয়ে নেওয়ার।

শুধু তমা নন, তাঁর মতো এইউডব্লিউর আরও ৯ শিক্ষার্থী এ বছর পেয়েছেন অদ্বিতীয়া বৃত্তি। তাঁরা সবাই পরিবারের প্রথম নারী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে হয় এ অনুষ্ঠান।

‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর অদ্বিতীয়া বৃত্তি সম্পর্কে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডেভ ডোল্যান্ড স্বাগত বক্তব্যে তাঁদের নানা সামাজিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোয় প্রথম আলো ট্রাস্ট ও আইডিএলসিকে ধন্যবাদ জানান।

তমা বর্মা ছাড়াও গত বছর এবং চলতি বছর অদ্বিতীয়া বৃত্তি পাওয়া আরও তিন শিক্ষার্থী তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। মোহিনী আফরোজ, তাসনিম আক্তার ও শাওন্তী ইসলাম জানান তাঁদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

এইউডব্লিউকে নারীদের জন্য দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলে অভিহিত করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। প্রথম আলোর বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম আলো সংবাদপত্র হলেও এটি সমাজ উন্নয়নেও কাজ করছে। প্রতিবছর অন্তত ৩৫টি ইভেন্ট করে। এর বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১২ সাল থেকে এইউডব্লিউতে ভর্তি হওয়া অসচ্ছল পরিবারের ১০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ৬৮ শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। তাদের সহায়তা ছাড়া এই অর্জন সম্ভব হতো না। 

আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান তাঁর বক্তব্যে ভবিষ্যতে এইউডব্লিউর শিক্ষার্থীদের তাঁর প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন ও চাকরিতে যোগদান করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আইডিএলসি প্রথম আলোর এ রকম একটি উদ্যোগের অংশ হতে পেরে খুবই খুশি।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী ও চিটাগং উইমেন চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনাল মাহবুব। 

অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে দেখানো হয় নারীশিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে এইউডব্লিউর তৈরি করা ভিডিও চিত্র, আইডিএলসির বেদেপল্লিতে শিক্ষা কার্যক্রম এবং পদ্মাপাড়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের গড়ে তোলা আলোর পাঠশালার ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শ্রাবস্তী রায় নাথ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের গ্রুপ চিফ মার্কেটিং অফিসার জানে আলম, এইউডব্লিউর পরিচালক (ভর্তি) রেহেনা খান, সমাজকর্মী ও ফ্যাশন ডিজাইনার রওশন আরা চৌধুরী, নারী উদ্যোক্তা লুৎফা সানজিদা, নাসরিন সারোয়ার, প্রথম আলো ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ফেরদৌস ফয়সাল ও নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। 

তমা বর্মা ও শাওন্তী ইসলাম ছাড়া এবার অদ্বিতীয়া বৃত্তি পাওয়া বাকি আট শিক্ষার্থী হলেন, লক্ষ্মী মনি কুর্মী, আজিমা খাতুন, সোহানা আক্তার, দোলেনা খাতুন, সাবরিনা মনছুর, মার্জিয়া ইসলাম, শান্তা যাদব ও সুমাইয়া তাসনিম। 

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বৃত্তি পাওয়া ছাত্রীদের হাতে সনদ তুলে দেন অতিথিরা। এই সনদ নিয়ে দলগত ছবি তোলার সময় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা একযোগে বলে ওঠেন, ‘আমরা সবাই অদ্বিতীয়া।’