বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার ত্রাণ বিতরণ

নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

‘হামার স্বামী দিনমজুরের কাম করে সংসার চালায়। কিন্তু এ সময় কাজকাম সব বন্ধ। তাই অনেক কষ্টে দিন কাটছিল। আইজ হামার দুই ছ্যালাপিলার দুটা খাবার বস্তা পাইয়্যা খুব ভালো হইল। কয়দিন আর খাওয়ার চিন্তা করা লাগবে না।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সামিট গ্রুপের সহায়তায় শুক্রবার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খাদ্যসামগ্রী পেয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আনোদী মুরমু। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ববিতা সাইচুরি ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আকাশ সাইচুরির মা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনো মেম্বার, চিয়ারম্যান বা কুনু সংস্থাও হামারঘে খোঁজ লিতে আসেনি। স্কুলই হামারঘে ল্যাগা খাওয়ার দিল। ধন্যবাদ স্কুলকে।’

খাদ্যসামগ্রী পেয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা খাতুনের মা তাসনারা বেগম বলেন, ‘এক মাস হতে গ্যালো, হামার পুরুষটার কাম নাই। এ করোনাভাইরাসের ল্যাগা ওর কাজকাম বন্ধ হয়্যা গেছে। ফেরি করা মনিহারির জিনিসপত্র বেচে। এখন বেচাতো দূরের কথা, বাইরেই যেতে পারে না। কী কষ্ট কইরা যে সংসার চলছে, তা বোঝানো যাইবে না। বাবুডাইংয়ের এখানে বাস করার ল্যাগা কেহু হামারঘে খোঁজ ল্যাই না। আইজ প্রথম আলোর ইসকুলের ল্যাগা এ চ্যাল, ড্যাল, ত্যাল, নুন, আলু, সাবান পাইনু। একটু কষ্টটা কমবে।’

বিদ্যালয়ের মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সামনে বেঞ্চের ওপরে খাদ্যসামগ্রী রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এসে খাবার প্যাকেট নিয়ে যায়।

খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত) কানাই চন্দ্র দাস, মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজারুদ্দিন, গ্রামের মোড়ল কার্তিক কোল টুডু, আতাউর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমুখ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন কানাই চন্দ্র দাস। প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর বলেন, বিদ্যালয়ের ২১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আগের দিনই শিক্ষকেরা বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী কিনে দিনব্যাপী তা প্যাকেট তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সকালে বিদ্যালয়ে প্যাকেট নিয়ে এসে মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গোল দাগ দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি প্যাকেটে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি লবণ ও একটি সাবান রয়েছে।

অনুষ্ঠানে খাবার প্যাকেট বিতরণের আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত-মুখ পরিষ্কার ও বাড়িতে নিয়মিত পড়ালেখা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।