'প্রথম আলো আশ্রয়কেন্দ্রই দুর্যোগে ভরসার স্থল'

প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র। গতকাল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন সিংহরতলী গ্রামে।  ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র। গতকাল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন সিংহরতলী গ্রামে। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

‘সিডর-আইলার সময় ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর রাত কেটেছে। নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব ভয়ে থেকেছি ঝড়ের প্রতি রাত। কিন্তু এখন যত বড় ঝড়ই হোক, আমাদের ভয় করে না। দুর্যোগে প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রই আমাদের ভরসা।’

বললেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সিংহড়তলী গ্রামের পল্লিচিকিৎসক মো. শহিদুজ্জামান। ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে রক্ষা পেতে তাঁর মতো ওই গ্রামের ৩০০ জনের বেশি মানুষ প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।

সিংহড়তলী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চুনকড়ি নদ। এর পূর্বদিকে বিস্তৃত সুন্দরবন। গ্রামের ৫০০ পরিবারের সদস্য অন্তত তিন হাজার। বাড়িঘর কাঁচা। চুনকড়ি নদের তীরেই প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এইচএসবিসি ব্যাংকের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয় এ আশ্রয়কেন্দ্র।

আম্পানের সময় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া প্রবীণ আহম্মদ সরদার বলেন, ‘১৯৮৮ সালের সাইক্লোনে আমরা গ্রামের মানুষ ওয়াপদা রাস্তার পাশে একটা ছোট দালানঘরের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচেছিলাম। তবে ওই ঝড়ে আমাদের গ্রামের কয়েকটি শিশু মারা যায়। এরপর থেকে আমাদের ছোট ছোট টিনের ঘরে থেকে অনেক ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করেছি। ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে প্রথম আলো অনেক টাকা ব্যয়ে আমাদের গ্রামে একটি সাইক্লোন সেন্টার করে দিয়েছে। ওই কেন্দ্রই এখনো আমাদের ভরসার জায়গা।’

গতকাল আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১৮৩ নম্বর সিংহড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুর্যোগের রাতে ৩০০ জনের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রয় নেওয়া মানুষকে সন্ধ্যায় ইফতার করানো হয়। পরে সরকারি আর্থিক সহযোগিতায় খিচুড়ি রান্না করে সবাইকে খাওয়ানো হয়েছে। সাহ্‌রির সময়েও তাঁদের খাবার দেওয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা বন্ধুসভার সহযোগিতায় আশ্রয় নেওয়া ৩০০ মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। গতকাল শুক্রবারও প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সিংহড়তলী ও কালিঞ্চি গ্রামের দেড় শ পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল ও আলু বিতরণ করা হয়।