ত্রাণ পেয়ে বেজায় খুশি চাঁদনী-নীলারা

চাঁদনী, কোহেলী, নীলা যশোর শহরের ষষ্টিতলাপাড়ার একই বাড়িতে থাকেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। অন্যের কাছ থেকে চেয়ে কিংবা নেচে-গেয়ে মানুষকে বিনোদন দিয়ে আগে যে রোজগারটুকু হতো, এখন তাও নেই। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। যে কারণে না খেয়ে বা আধপেটা খেয়ে দিন চলছে তাঁদের। গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণের চাল-ডাল-আলু পেয়ে তাই বেজায় খুশি তাঁরা।

গতকাল প্রথম আলো যশোর অফিসে তৃতীয় লিঙ্গের ২০ জনসহ মোট ৫৫ জনের হাতে ত্রাণসহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কেশবপুর উপজেলার ৭০টি ও সদর উপজেলার ১৪টি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। তিন জায়গায় মোট ১৩৯টি পরিবারের সদস্যরা এ ত্রাণসহায়তা পেয়েছেন।

মোটরশ্রমিক মোহাম্মদ হাকিম দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। গতকাল প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে হাকিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ ছিল। দুই দিন হলো আবার কাজ শুরু করেছি। প্রায় তিন মাস ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছি। এখনো কষ্টের সেই ক্ষত শুকায়নি। আমাদের চাল-ডাল পেয়ে অনেক উপকার হলো।’

ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর বন্ধুসভার সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, অনুষ্ঠান সম্পাদক মুসলিমা আক্তার, কাজী তাহামিনা, কাজী ইসরাত শাহেদ প্রমুখ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার যশোরের কেশবপুর উপজেলার খাদ্যগুদাম চত্বরে ৭০টি পরিবার ও বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার সতিঘাটা বাজারে আরও ১৪টি পরিবারের অসহায় মানুষের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

কেশবপুর উপজেলার প্রথম ভ্যানচালক শত বছরের প্রবীণ ব্যক্তি কোনায় মোড়ল নিজে পায়ে হেঁটে খাদ্যগুদাম চত্বরে ত্রাণসামগ্রী নিতে আসেন। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ১০০ বছরের ওপরে। কেশবপুরে প্রথম ভ্যান চালানো শুরু করেছিলাম আমি। ছয় মাস আগেও আমি ভ্যান চালিয়েছি। এখন আর পারি না। মাঠে আমার কোনো ধানি জমি নেই। বসতবাড়িটুকুই সম্বল। ছেলেমেয়ে আছে। তাদের বিয়ে দিয়েছি। ছেলে দিনমজুরের কাজ করে। করোনার কারণে তারও এখন কাজ বন্ধ। খুব অভাব যাচ্ছে। প্রথম আলোর চাল-ডালের কিছুদিন ভালোভাবে যাবে।’

কেশবপুর খাদ্যগুদামে ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মনিমোহন ধর, খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন প্রমুখ। ত্রাণ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেন যশোর ও কেশবপুর বন্ধুসভার সদস্যরা।