খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি প্রথম আলো চরের মানুষ

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় কুড়িগ্রামে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেই খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় কুড়িগ্রামে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেই খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে। ছবি: প্রথম আলো

বর্গা চাষ করেই সংসার চালাতেন কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরের মো. জিয়ারুল (৩৬)। সাম্প্রতিক ঝড় এবং বন্যায় ফসল পুরোটাই নষ্ট হয়েছে। জিয়ারুলের ছেলে চরের আলোর পাঠশালায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। গতকাল বাবা-ছেলে এসেছিলেন আলোর পাঠশালার প্রাঙ্গণে, খাদ্যসামগ্রী নিতে।

করোনাসংকটের ওপর ঝড়–বন্যা। এসব নানা দুর্বিপাকে প্রত্যন্ত এই প্রথম আলো চরের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বরাবরের মতো এবারও দাঁড়িয়েছে এই চরের মানুষের পাশে। গতকাল শনিবার সকালে দ্বিতীয় দফায় এই চরে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ঈদের আগে একবার এখানে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঘোগাদহ ঘাট। সেখান থেকে নৌকায় এক ঘণ্টা যাত্রার পর প্রথম আলো চরের এক প্রান্ত। সেখান থেকে হেঁটে প্রায় এক কিলোমিটার পরে বিদ্যালয়টির প্রাঙ্গণ। গতকাল আলোর পাঠশালা বিদ্যালয়টির ২৫৩ জন শিক্ষার্থী ও চরের ৪৫টি পরিবারকে খাদ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে ছিল এক কেজি মসুর ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি লবণ, আধা কেজি রসুন ও দুটি করে সাবান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্যাকেটগুলো দেওয়া হয়।

খাদ্যসামগ্রী পেয়ে কৃষিশ্রমিক জিয়ারুল বলেন, ‘একমাত্র প্রথম আলোর স্কুলের জন্যই দুবার খাদ্যসামগ্রী পাইলাম। এটা পেয়ে কী যে উপকার হলো, তা বোঝাতে পারব না।’

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া নাতির সঙ্গে এসেছিলেন তবিজন বেগম (৪৮)। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা হামরাকে খাবার দিয়্যাছো। এতে অনেক উপকার হইয়্যাছে।’

খাদ্য বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবহান ব্যাপারী, সদস্য ফজলার রহমান, মজিবুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান প্রমুখ।

প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, বিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম আলো বিদ্যালয়টি পরিচালনার খরচসহ যাবতীয় সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। এ জন্য এলাকার মানুষ কৃতজ্ঞতার প্রকাশ স্বরূপ চরটির নাম রেখেছে প্রথম আলো চর। সরকারি কাগজেও চরটি এই নামেই পরিচিতি পেয়েছে। বিদ্যালয়টির কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়মুখী করা গেছে। ফলে কমেছে এ এলাকায় বাল্যবিবাহের হার। বিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থী এখন কলেজে পড়াশোনা করে।

দেশের প্রত্যন্ত এলাকা ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদে জেগে ওঠা চরটি প্রথম আলো চর নামেই পরিচিতি পেয়েছে। এই চরে একটি বিদ্যালয়সহ প্রথম আলো ট্রাস্ট মোট ছয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা করে। এসব বিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০ জন শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে সারা বছর পড়াশোনা করে। আর এসব কাজে সহযোগিতা করে সামিট গ্রুপ। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১ হাজার ২০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।