দুঃসময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ায় যে বিদ্যালয়

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। রোববার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। রোববার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

কেবল বিনা খরচে পড়াশোনা নয়। শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারগুলোর বিপদের দিনেও পাশে দাঁড়ায় এ বিদ্যালয়। গত রোববার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্রভূমির গহিনে অবস্থিত বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় ত্রাণ নিতে এসে অভিভাবকেরা এমন প্রতিক্রিয়াই জানান।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহায়তায় গত রোববার ও শনিবার যথাক্রমে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত দুটি আলোর পাঠশালার ৩৫৩ জন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় দফায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।

বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি—দেশের এ রকম ছয়টি প্রত্যন্ত এলাকায় সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় ‘আলোর পাঠশালা’ পরিচালনা করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। বর্তমানে কুড়িগ্রামে একটি, রাজশাহীতে দুটি, ভোলায় একটি, নওগাঁয় একটি ও টেকনাফে একটি করে মোট ছয়টি বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে ১ হাজার ২০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এখান থেকে পাঠগ্রহণ করে অনেকে এখন কলেজ ও উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করছে। বিপদের সময় এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও সামিট গ্রুপ।

রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ হিসেবে প্রতিটি প্যাকেটে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, একটি মিষ্টি কুমড়া, এক কেজি ডাল, এক কেজি আটা, এক কেজি লবণ, আধা লিটার সয়াবিন তেল ও একটি সাবান দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ পেয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা ফুলরানী কোল মুরমু ও তৃতীয় শ্রেণির আরেক ছাত্রীর মা রাধামুনি টুডুকে বলছিলেন, এ বিদ্যালয় তাঁদের জন্য যা করেছে, তা এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানরাও করেননি। করোনাকালে বিদ্যালয়টি থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য দুইবার করে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁরা অন্তত কয়েক দিন নিশ্চিন্তে চলতে পারবেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সুজারুদ্দিন, কার্তিক কোল টুডু, দুলালী বেগম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমুখ।

অন্যদিকে গত শনিবার রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালার ১৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে প্রতিটি প্যাকেটে ছিল পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি লবণ, দুই কেজি ময়দা ও একটি সাবান। ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন, রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধু আরিফ হোসেন, ঋতু ইয়াসমিন প্রমুখ।

ত্রাণ পেয়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা রাবেয়া বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সংসারের হাল টানছেন তিনি। করোনাকালে আয় বলতে কিছুই নেই। এর মধ্যে দুবার করে ত্রাণ পেয়ে কয়েক দিনের জন্য খাওয়ার কষ্ট দূর হয়েছে।