'অবস্থা ভালো ছিল বলে, কেউ ত্রাণও দেয় না'

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গেউয়াবুনিয়া গ্রামে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭০ পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার খুলনার পাইকগাছার গেউয়াবুনিয়ায়।  ছবি: সাদ্দাম হোসেন
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গেউয়াবুনিয়া গ্রামে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭০ পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার খুলনার পাইকগাছার গেউয়াবুনিয়ায়। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

গোলা ভরা ধান, ঘের ভরা মাছ, টিনের ঘর—সবই ছিল লক্ষ্মী রানী মণ্ডলের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সবকিছু। ভেঙে পড়েছে ঘর। ঝড়ের রাতে কোনোরকম সাঁতরে কাছের বাঁধের ওপর আশ্রয় নেন। সেই থেকে বাঁধের ওপর কোনোরকমে ছাউনি তুলে বসবাস করছেন।

লক্ষ্মী রানী মণ্ডলের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দ্বীপবেষ্টিত দেলুটি ইউনিয়নের গেওয়াবুনিয়া গ্রামে। ঝড়ের রাত থেকেই গ্যাংরাইল নদীর বাঁধের ওপর অবস্থান করছেন তিনিসহ সব হারানো অনেকগুলো পরিবার। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া দুটি গ্রামের ১৭০টি পরিবারের ঘরে গত মঙ্গলবার খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিয়েছে প্রথম আলো। প্রথম আলো ট্রাস্টের ওই খাদ্যসহায়তা বিতরণে সার্বিক সহযোগিতা করেছে প্রথম আলো খুলনা বন্ধুসভা।

ত্রাণ পেয়ে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন লক্ষ্মী রানী মণ্ডল। ধরা গলায় বলেন, ‘পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল বলে কেউ ত্রাণও দেয় না। ত্রাণের জন্য কারও কাছে হাতও পাততে পারি না। এই ত্রাণ পেয়ে কয়েক দিন অন্তত চলবে।’ তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আইলার সময়ও সবকিছু তলিয়ে গেলেও কয়েক মণ চাল রক্ষা করতে পেরেছিলাম। ওই চাল দিয়ে আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারকে সহায়তা করেছি। কিন্তু এবার নিজেরই কিছু নেই, হাত পাততে হচ্ছে অন্যের কাছে।’

গেওয়াবুনিয়ায় সড়কপথে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বটিয়াঘাটা উপজেলার মধ্য দিয়ে পিকআপে করে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া হয় দেলুটি ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত। এরপর সেখান থেকে ট্রলারে করে প্রায় ঘণ্টাখানেক যাওয়ার পর গেওয়াবুনিয়া খেয়াঘাট। ট্রলার থেকে নেমে বাঁধের রাস্তার ওপর উঠতেই চোখে পড়ে ঝড়ের তাণ্ডবের চিহ্ন। এখানে–সেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঘরগুলো। কোনো কোনো ভেঙে পড়া ঘরের মধ্য দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আসবাবপত্র। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ধানের গোলা রয়েছে। তবে জোয়ারের পানিতে সবই নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁধের দুই ধারে কোনোরকমে ঘর করে বসবাস করছেন মানুষ।

তাঁদেরই একজন শেফালী মণ্ডল বলেন, ঝড়ের পর থেকে প্রায় ১০ দিন পানিবন্দী থাকতে হয়েছে তাঁদের। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ দেওয়ার পর জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। পানি সরে যাওয়ার পর গোলা থেকে ধান বের করে দেখেন সবই নষ্ট হয়ে গেছে। ওই গোলার মধ্যে সারা বছরের জন্য ধান সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। এখন কী খাবেন, তা নিয়েই দুশ্চিন্তা।

ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবীন কুমার মণ্ডল ও খুলনা বন্ধুসভার সদস্যরা।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। গতকাল পর্যন্ত এখানে মোট জমার পরিমাণ ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।