'বাচ্চাগুলার দিকে চাইতে পারি না'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চর হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চর হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

‘বাচ্চাগুলার দিকে চাইতে পারি না। প্যাড ভইর‌্যা দুগ্গা ভাত দেওনের অবস্থা নাই। এই চাউল-ডাইল পাওনে কয়ডা দিন একটু আছান অইবে।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তার ব্যাগটা হাতে পেয়ে চোখ ছলছল মুক্তা বেগমের। কয়েক দিন এই খাবারে চলতে পারলেও সামনে যে তাঁর ঘোরতর দুর্দিন, সে কথাও বারবার বললেন। বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের পশুরিকাঠি গ্রামে কীর্তনখোলা নদীর তীরে যে ঘরটায় থাকতেন, সেটাও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্বামী কোনো কাজ করেন না। আগে মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন, কিন্তু করোনার কারণে এখন সে কাজও নেই। এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করা টাকায় কয়েক দিন সংসার চালিয়েছেন। এখন ছোট দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে পড়েছেন অকুল পাথারে। এক বেলা খাবার জোটে তো দুই বেলা জোটে না—এমন অবস্থায় দিন যাচ্ছে।‌

গত বৃহস্পতিবার বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের কীর্তনখোলা নদীর তীরে চরহোগলা, পশুরিকাঠি, গিলাতলী গ্রামের ৬০ পরিবাররে মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের খাদ্যসহায়তা বিতরণ করা হয়। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বন্ধুসভার সদস্যরা এসব গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সহায়তা পৌঁছে দেন। খাদ্যসহায়তা হিসেবে ছিল চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপণ্য।

গত মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এই এলাকায় অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। করোনার কারণে গ্রামে-শহরে কোথাও কাজ নেই। খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

সহায়তা নিতে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব সোনা বরুর। দারিদ্র, রোগ-শোকে নুয়ে পড়েছেন। বললেন, ‘খাওন-পরনে কষ্ট কইয়্যা বুঝাইতে পারমু না। তোমাগো চাউল পাইয়্যা খুব উপকার অইলো বাবা’। সোনা বরুর স্বামী মারা গেছেন বছর সাতেক আগে। নিজের ঘর নেই, থাকেন বোনের বাড়িতে। বোনের বাড়িটাও ঝড়ে ভেঙে গেছে। এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে চট্টগ্রামে শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আগে ২-৩ মাস পরপর ৪০০-৫০০ টাকা পাঠাতেন। আর মেয়েও কিছু দিতেন। কিন্তু এখন ছেলের কাজ নেই, তাই টাকাও পাঠাতে পারেন না। আর মেয়ের জামাই মারা গেছেন তিন মাস আগে। এখন নিজের চলতেই কষ্ট হয়। সোনা বরুর এখন দুর্দিনের শেষ নেই।

কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে অথই সাগরে পড়ার মতো অবস্থা হয় চরহোগলা গ্রামের শাহনাজ বেগমের (৪৫)। রাস্তা নির্মাণের শ্রমিকের কাজ করে চলছিলেন। এখন সে কাজ নেই। বাধ্য হয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। সে কাজ থেকেও ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান, তাতে তাঁর ছোট্ট ঘরটাও ভেঙে পড়ার জোগাড় হয়েছে। বললেন, ‌‘খাওনে টানাটানি, সামনে বর্ষাকাল। ঘরটুক ঠিক করতে না পারলে থাকমু ক্যামনে? আপনেগো চাউল-সদায় পাওনে একটু কইলজায় পানি আইছে’।

এসব পরিবারের মধ্যে সহায়তা বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সমাজসেবক শামীম হোসেন, বরিশাল বন্ধুসভার সভাপতি মেহেদী হাসান পিয়াস, অনুষ্ঠান সম্পাদক নৃত্যশিল্পী মিজানুর রহমান প্রমুখ।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায়

আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম : প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।