'আঁরার গরোত হাইদ্য নাই'

বিদ্যালয়ের মাঠে সারি সারি রাখা হয় বস্তাভর্তি চাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলু। পরে বিদ্যালয়ের মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীরা খাদ্যসামগ্রী বুঝে নেয়। গত শুক্রবার টেকনাফের দমদমিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আলোর পাঠশালায়।  ছবি: প্রথম আলো
বিদ্যালয়ের মাঠে সারি সারি রাখা হয় বস্তাভর্তি চাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলু। পরে বিদ্যালয়ের মাঠে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীরা খাদ্যসামগ্রী বুঝে নেয়। গত শুক্রবার টেকনাফের দমদমিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আলোর পাঠশালায়। ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফের দমদমিয়ার আবদুল হামিদ (৫২) সাগরে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি সরকার ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। করোনার কারণে অন্য কোনো কাজও জোটাতে পারছেন না। হামিদের এক ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালা বিদ্যালয়ে। গত শুক্রবার ছেলের হাত ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে খাদ্যসহায়তা নিতে এসেছিলেন এই বাবা। ব্যাগটা হাতে পেয়ে বললেন,

‘আঁরার গরত হাইদ্য নাই। আঁরার এন হারাপ সময়ত প্রথম আলো যে বালা হাজ গইজ্জ্যে, ইয়ান ক্যাং গরি বুজাইতাম।’ (আমার ঘরে খাবার নেই। আমার এই খারাপ অবস্থার মধ্যে প্রথম আলো যে কী উপকার করেছে, তা কী করে বোঝাই।)

 প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় গত শুক্রবার সকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে নাফ নদীর তীরসংলগ্ন দমদমিয়ায় অবস্থিত আলোর পাঠশালার ১৫৫ জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষককে দ্বিতীয়বারের মতো খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। খাদ্যসহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে সাড়ে আট কেজি চাল, আধা লিটার সয়াবিন তেল, আধা কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি আলু দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছিলেন মাহমুদা বেগম। নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরে এই মা বলেন, তাঁর স্বামী মোহাম্মদ হোসেন এক বছর ধরে বন মামলায় কারাগারে। আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসারটা চালাচ্ছিলেন। করোনার কারণে সেই কাজও
পাচ্ছেন না। দুবেলার খাবারই জোটাতে পারছেন না। এ অবস্থায় মেয়ের বিদ্যালয় থেকে পাওয়া খাবার দিয়ে তাঁদের কয়েক দিন চলে যাবে বলে কিছুটা স্বস্তিতে তিনি।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রফিকের পরিবারের এখন কোনো আয় নেই। এই শিশুটি জানায়, তাদের সংসারের পাঁচজন সদস্য রয়েছে। বাবা নবী হোসেন ও বড় ভাই শওকত আলম দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন দিনমজুরের কাজ বন্ধ। বড় ভাই মাঝেমধ্যে রিকশা চালিয়ে কোনোভাবে খাবারের জোগান দিতেন। এর মধ্যে বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঘরে খাবার বলতে কিছু ছিল না। এই খাবার দিয়ে তাঁদের অন্তত দুদিন চলবে।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদুল আলম, টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রফিক রানা প্রমুখ।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি—এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বর্তমানে ছয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। টেকনাফের বিদ্যালয়টি এর একটি।

বিদ্যালয় প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরেই নানা সমস্যায় বন্ধের উপক্রম হয়। ঠিক সেই সময়ে প্রথম আলো ট্রাস্ট বিদ্যালয়টি পরিচালনার যাবতীয় ভার নেয়। বিদ্যালয়টির কারণে অনেক শিশুকে নিয়মিত বিদ্যালয়মুখী করা যাচ্ছে।