'স্বামী খাইছে বাঘে, আমাগো তুফানে'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

স্বামী গেছে বাঘের পেটে। আর একের পর এক ঝড়-ঝঞ্ঝার সঙ্গে লড়ে চলেছেন জামিলা বেগম (৬০)। সর্বশেষ আম্পানে একেবারে নিঃস্ব সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের এই বাঘবিধবা। এখানকার মানুষের ধারণা, বাংলাদেশে যেই ঘূর্ণিঝড়ই আসুক না কেন তা বুড়িগোয়ালিনী স্পর্শ না করে যায় না। ঝড়েই সব গেছে এখানকার মানুষের। জলোচ্ছ্বাসে লোনাপানি ঢুকে কৃষিজমিগুলো নষ্ট হয়েছে, চাষাবাদ হয় না। গ্রামগুলোতে খাবার নেই এবং পানিরও সংকট। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ কাজ করতে বড় শহরগুলোতেও যেতে পারছে না। সব মিলিয়ে নিদারুণ এক পরিস্থিতি।

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার দুপুরে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ১৫৫টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। সহায়তা নিতে আসা বাঘবিধবা জামিলা বেগম (৬০) আর তৈয়াবা বিবি (৫৫) বলছিলেন নিজেদের আর বুড়িগোয়ালিনীর দুঃখের কথা। জামিলা বলেন, ‘আমাগো স্বামীদের খাইছে বাঘে। বাদায় মুধু কাটতি গেছিল। আর আমাগো খাতিছে ঝড় তুফানে। এলাকায় কাজনি। পেঠে দানামানি যাচ্ছে না। একবিলা হয় তা আর একবিলা হয় না। তুমোগে ত্রাণ পাইয়ে দুই-চার দিন খাতি পারবুনে।’

সাতক্ষীরা থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে কাগজে-কলমে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। সুন্দরবন আর লোকালয়ের মধ্যে প্রমত্তা খোলপেটুয়া নদী। ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা এরপর নার্গিস, বুলবুল এবং সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে পুরোই বিধ্বস্ত এই ইউনিয়নের মানুষের জীবন ও জীবিকা। ২০০৯ সালে আইলার সময় গ্রামে জলোচ্ছ্বাসের লোনাপানি ঢুকে সর্বনাশ করে। এরপর থেকেই চাষবাস বন্ধ। কেবল চিংড়ি আর কাঁকড়া চাষ হয় এখানকার জমিতে। লোনাপানির দাপটে বহুদিন থেকে চলছে খাওয়ার পানির সংকট। কিছু পুকুরে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা বছরভর পান করতেন গ্রামবাসী। গত মাসে আম্পানে সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে খাওয়ার পানির আধারগুলোও লোনাপানিতে দূষিত হয়েছে।

খাদ্যসহায়তা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভা সাতক্ষীরা সভাপতি জাহিদা জাহান, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সহসভাপতি মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ।

এ পর্যন্ত প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে ৩০ লাখ টাকা অনুদান জমা পড়েছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৬৩৫টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।