'মানুষের কাছে হাত পাত্তি কষ্ট হয়, লজ্জা লাগে'

ফসলের খেত, চিংড়ির ঘের সবই ছিল আবদুস সোবহানের (৬৫)। করোনাকালেও পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে চলতে তেমন কষ্ট ছিল না। এক আম্পানেই সব শেষ। গত মাসে আঘাত হানা এ ঘূর্ণিঝড়ে খেত নষ্ট হয়েছে, ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এখন অন্যের কাছে হাত পাততে হচ্ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের সোবহানকে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কাশিমাড়ী ও নূরনগর ইউনিয়নের ১৫৫টি পরিবারকে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। খাদ্যসামগ্রী দিয়ে গ্রামটি থেকে যখন বন্ধুসভার সদস্যরা ফিরছিলেন অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা আবার কবে আসবে?’ গ্রামের আরও অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন সেই জবাবের অপেক্ষায়।

খাদ্যসামগ্রী পেয়ে কাশিমাড়ীর আবদুস সোহবান বলেন, ‘মানুষের কাছে হাত পাত্তি কষ্ট হয়, লজ্জা লাগে। কিন্তু কী করবো বলো! তুমরা দিলা বলে দুই–চার দিন খাতি পারব। আবার দুদিন পর খাবারের জন্যি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে যাতি হবে। ওরা যদি মনে করে আমি ওগে ভোটার না, তালি আর কিছু দেবে না। এত অবিশ্বাস নে চলা যায়! দুর্যোগের সময় এত দলাদলি কিসের গো।’

সাতক্ষীরা শহর থেকে শ্যামনগর সদর ৬০ কিলোমিটার, সেখান থেকে কাশিমাড়ী আরও ১৫ কিলোমিটার। শ্যামনগর থেকে কাশিমাড়ী যাওয়ার পথে ত্রাণ বহনকারী ট্রাক আটকে গেল পানি আর কাদায়। অগত্যা ভ্যানে খাদ্যসামগ্রী তুলে পায়ে হেঁটে বন্ধুসভার সদস্যরা কাশিমাড়ী পৌঁছান। চারদিকে পানি আর পানি। সব ডুবে রয়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে রোববার বন্ধুসভার সদস্যরা কাশিমাড়ী ইউনিয়নে গিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেন। খাদ্যসামগ্রীর ব্যাগটা হাতে পেয়ে শত কষ্টের মধ্যেও হেসে ওঠেন জয়নগর গ্রামের রমেছা খাতুন (৬৫)। তাঁর সব ক্ষোভ বাঁধের ওপর। তিনি বলেন, ‘এভাবে আর পানিতে কত দিন থাকা যায়? জোয়ারের সময় সব ডুবে যায়। ভাটায় সব কাজ করতি হয়। আম্পানের পর মাস পার হচ্ছে, কিন্তু বাঁধ মেরামত হলো না। রান্না-খাওয়ার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকালে সব আঁধার হয়ে আসে। কাজকাম নেই। কীভাবে চলবে সামনের দিনগুলো! ত্রাণের ব্যবস্থা নেই। চেয়েচিন্তে আর ধারদেনা করে কয়দিন যাবে? একবার কারা এসে দুটো চিড়েমুড়ি দেল, আর এই তুমারা চাল–ডাল দিলে। কয়ডা দিন আর খাবার চিন্তা করতি হবে না।’

গতকাল খাদ্যসহায়তা বিতরণ কার্যক্রমে প্রথম আলো বন্ধুসভা সাতক্ষীরার সভাপতি জাহিদা জাহান, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সহসভাপতি, মোহাম্মদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন, তুহিন হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুদান দিল ঢাবি অর্থনীতি ৭৬

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের ত্রাণ তহবিলে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইকোনমিক্স ১৯৭৬ ফাউন্ডেশন’ এক লাখ টাকা ও অভিনেত্রী সাঈদা ইসলাম পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম : প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।