'তিনডা মাস কোনো কাম নাই'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের গোমা কৃষ্ণকাঠী কৈলাসচন্দ্র  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের গোমা কৃষ্ণকাঠী কৈলাসচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

ছোটবেলায় দুর্ঘটনার কারণে আক্কাস হোসেনের (৩৫) বাঁ হাতের সব কটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়। সেই হাতেই এত দিন মা, তিন ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছয়জনের সংসার টেনেছেন আক্কাস। তিন মাস ধরে কাজ নেই। পৈতৃক ভিটায় যে খুপরি ঘরে থাকতেন, সেটিও গত মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ভেঙে গেছে।

বরিশাল সদরের জাগুয়া ইউনিয়নের কালিজিরা গ্রামের আক্কাস হোসেন গতকাল বুধবার সকালে এসেছিলেন খাদ্যসহায়তা নিতে। বললেন, ‘মোগো কী যে কষ্ট, বুঝাইতে পারমু না। তিনডা মাস কোনো কাম নাই। তার উপ্রে আম্পান। চাইয়্যা-চিন্তা এই রহম নি দিন চলে!’

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশালের দুটি উপজেলার ৭০টি পরিবারকে গত দুই দিনে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার টানা বর্ষণের মধ্যেও বন্ধুসভার সদস্যরা বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি ও চরহোগলা গ্রামের ৫৫ জনকে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেন। আর গতকাল সহায়তা দেওয়া হয় সদরের জাগুয়া ইউনিয়নের কালিজিরা এলাকায় ১৫টি পরিবারকে। ভাঙনকবলিত পাণ্ডব নদের তীরের চর হোগলা, কৃষ্ণকাঠি এই দুই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন কাটছে চরম অবস্থার মধ্যে।

চর হোগলা গ্রামের বাসিন্দা কালাচান দাসের (৫৫) ছোট ঘরটুকুও আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত। আগে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এখন সে কাজও নেই। বড় ছেলে কার্তিক দাসকে ক্ষুদ্রঋণ এনে একটি তিন চাকার যান কিনে দিয়েছিলেন। এখন তাতেও আয় নেই। ঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না। ঘরে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বললেন, ‘এহন দুগ্গা খাইয়্যা বাঁচনই দায়। আপনাগো সাহায্যে খুব উপকার অইলো।’

কৃষ্ণকাঠি গ্রামের পাণ্ডব নদের তীরের গৃহিণী মঞ্জু রানী (৩৫) একাই চার ছেলেমেয়েসহ ছয়জনের সংসার টানছেন। স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী। মঞ্জু বিলে-বাদাড়ে ঘুরে শাকসবজি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পান, তাই দিয়েই চলে সংসার। ছোট্ট টিনের ঘরটাও আম্পানে নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই নারী বলেন, ‘শাক-পাতা টোকাইয়্যা কোনো দিন ৭০ টাহা আবার কোনো দিন ৫০ টাহাও বেচতে পারি না। এই দিয়া কোনো রহম দিন চালাইতে লাগজি।’

মঙ্গলবার দুধল ইউনিয়নের কৈলাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে খাদ্যসহায়তা বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সমাজসেবক আশরাফ আলী সিকদার, বন্ধুসভার সভাপতি মেহেদী হাসান পিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক নাইম ইসলাম প্রমুখ।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।