'বউ-বাচ্চা লইয়্যা ক্যামনে যে বাঁচমু'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার  গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামে পাল পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে।  ছবি: সাইয়ান
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামে পাল পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে। ছবি: সাইয়ান

দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চারজনের সংসার প্রেমানন্দ পালের (৫০)। তাঁরা কয়েক পুরুষ পেশায় কুমোর। মাটির তৈজস তৈরি ও বিক্রি করে আগে মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করতেন। তা দিয়েই চলত সংসার। করোনার কারণে এখন বাজারে কেউ এসব তৈজস কিনছেন না। মাসে দুই-তিন হাজার টাকাও আয় নেই। সংসারে এখন খাবারের সংকট। এর উপর গত মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বসতঘরটারও ক্ষতি হয়েছে। মেরামত করার সামর্থ্য নেই।

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সহায়তা পেয়ে প্রেমানন্দ বললেন, ‘আপনারা এই দুর্দিনের সময় মোগো খুব উপকার করলেন। কয়ডা দিন এহন নিশ্চিন্তায় কাটাইতে পারমু।’

গতকাল শনিবার দুপুরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের পালপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০টি পাল পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, আলুসহ নিত্যপণ্য বিতরণ করা হয়। প্রেমানন্দ পালের মতো দুরবস্থায় রয়েছে এখানকার আরও অনেকগুলো পরিবার।

একই গ্রামের শিবানন্দ পালের (৫০) ছয়জনের সংসারটাও করোনা আর আম্পানে বিধ্বস্ত। ঘরটাও আম্পানে হেলে পড়েছে। শিবানন্দ বললেন, ‘আগে ১৫-২০ হাজার টাকা মাসে ইনকাম অইতো। এহন পাঁচ হাজার অওনেও টান। ঘরে থাওনে টানাটানি। বউ-বাচ্চা লইয়্যা ক্যামনে যে বাঁচমু!’

আর গোলাপি রানীর (৪৮) স্বামী নিত্যানন্দ পাল দীর্ঘদিন রোগে ভুগে মারা গেছেন মাস দেড়েক আগে। এরপরই আম্পানের হানায় ঘরটা হেলে পড়ে। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে। এক মেয়েকে নিয়ে হেলেপড়া ঘরেই থাকতেন তিনি। আগে মাটির তৈজস তৈরির জোগালির কাজ করে সংসার চালাতেন। করোনায় মাটির তৈজসের বাজার মন্দা হওয়ায় এখন সে কাজও নেই। তাই এবাড়ি-ওবাড়ি ফাই-ফরমায়েশ খেটে যে খাবার পান, তা দিয়ে মা-মেয়ে দুজনে ভাগাভাগি করে খেয়ে দিন চলছে। গতকাল প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসহায়তার ব্যাগটা হাতে পেয়ে গোলাপি রানীর প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড়। বললেন, ‘ঘরে চাউল নাই অনেক দিন। অন্যের বাড়ি খাটনি খাইট্টা যে খাওন জোটাই হেইয়্যা মায়-ঝি দুইজনে ভাগ কইর‌্যা খাইয়্যা দিন চলে। অনেক দিন পর এতেগুলা চাউল-সদায় চক্ষে দ্যাখলাম।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের এই খাদ্যসহায়তা বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন গৈলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম পাল, স্থানীয় মনসা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কর্মকার, বরিশাল বন্ধুসভার সভাপতি মেহেদি হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাইম ইসলাম প্রমুখ।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।