ঘরে বসেই ত্রাণ পাবেন, এটা ভাবেননি তাঁরা

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নটি বুড়িগঙ্গার তির ঘেঁষে। এখানকার অনেকগুলো গ্রাম থেকে পানি এখনো নামেনি, রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে। খারজানি গ্রামের নুরজাহান বেগম (৪৫)নৌকার অভাবে ত্রাণ নিতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে যেতে পারেননি। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা কিছু পথ নৌকায়, কিছুটা কাদামাটি মাড়িয়ে হেঁটে নূরজাহানের বাড়িতে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছানোর পর আপ্লুত হয়ে পড়েন এই নারী। বললেন, ‘ইলিপ নিব্যার যাবার জন্নে নাও (নৌকা) পাই নাই। তোমরা হামারঘরে বাড়িত চাউল–আলু ম্যালা কিচু নিয়্যা আচচেন। আল্লায় তোমারঘরে পোত্তম আলোর (প্রথম আলোর) ভালো করুক বাবা।’

কামারজানি ইউনিয়নে গতকাল বুধবার ১০০টি বন্যার্ত পরিবারকে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। আগের দিনই এলাকায় ঘুরে ১০০ জনের তালিকা তৈরি করে স্লিপ দিয়ে আসেন বন্ধুরা। আর গতকাল ইউপি কার্যালয় চত্বরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ২০ জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া, খারজানি ও বাটকামারি গ্রামে ৮০ জনের বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। বন্যার্ত এই মানুষগুলো কেউ পানির কারণে আর কেউ অসুস্থতার কারণে ইউপি চত্বরে ত্রাণ নিতে যেতে পারেননি। তাঁদের প্রত্যেককে পাঁচ কেজি চাল, আধা কেজি মসুরের ডাল, এক কেজি লবণ ও এক কেজি আলু দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার কামারজানি মাচের্ন্ট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে একই ইউনিয়নের গোঘাট, কড়ইবাড়ি ও পারদিয়ারা গ্রামের ১০০ জন বন্যার্তের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হয়।

গতকাল পরিষদ চত্বরে ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন কামারজানি মার্চেন্ট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সামাজিক উন্নয়ন পদক্ষেপের (এসইউপি) নির্বাহী পরিচালক সাদ্দাম হোসেন, গাইবান্ধা প্রথম আলো বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্লাত হোসাইন ও ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।

পরিষদ চত্বরে ত্রাণ পেয়ে কুন্দেরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান (৬০) বললেন, ‘১১ দিন হলো বানদোত (ব্রহ্মপুত্র বাঁধ) আচি। ইলিপ দেওয়া দূরের কতা, কী খাচ্চি কোনো চেরমেন–মেম্বর খবর নিলো না।’ তিনি বলেন, ‘না চাইতে তোমারঘরে পোত্তম আলোত থাকি ইলিপ দিব্যার আচচেন। চাউল ডালকোনা পায়া উপক্যার হলো।’

এর আগে গতকাল সকালে খারজানি গ্রামে নৌকাযোগে গিয়ে ত্রাণ দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। গ্রামের ছালেহা বেগমের (৪৫) বাড়ি থেকে পানি নেমেছে, তবে পুরো আঙিনা কাদায় থকথকে। বাড়িতে ত্রাণ পেয়ে ছালেহা বললেন, ‘তোমরাঘরে কোন সরকারের নোক বাবা, হামার বাড়িত ইলিপ দিব্যার আচচেন?’ সরকার নয়, প্রথম আলো থেকে এসেছেন তাঁরা জানানোর পর তিনি বলেন, ‘তোমারঘরে ভালো হবি।’ বাড়িতে ত্রাণ পেয়ে একই গ্রামের আবদুল জলিল (৬০) বলেন, চাউলকোনা পায়া খুব খুশি হল্যাম বাবা। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে বাটকামারি গ্রামে যান বন্ধুরা। এই গ্রামের কৃষক মিয়াজান আলী (৫৬) বলেন, ‘বানোত তিনটে ঘর ভাঙ্গি গেচে। তাক ঠিক করব্যার নাগচি। তোমরাঘরে বাড়িত আসি ইলিপ দিলেন, তোমারঘরে ছোয়াব হবি।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম : প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।