'এলা মুই মাইনষের ঠে চায়া খাঁও'

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নীলফামারীর বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই কলোনি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে নীলফামারীর বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই কলোনি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

‘মোর আবাদের জমি ডুবি আছে, এলা মুই মাইনষের ঠে চায়া খাঁও। মুই খুব অসুস্থ, শরীর চলে না। চিকিৎসা করির টাকাপাইসা নাই, তার উপরোত এই বন্যা।’

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই গুচ্ছগ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন (৮০) ত্রাণের প্যাকেটটা হাতে পেয়ে কেঁদে ফেলেন। বললেন নিজের দুর্দশার কথা।

গতকাল শনিবার ছাতনাই কলোনি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রথম আলো নীলফামারী বন্ধুসভার সদস্যরা। প্রতিটি পরিবারকে চাল, আটা, আলু, ডাল ও লবণের একটি করে প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান, শিক্ষক সহিদুল ইসলাম, বুলবুল হক সরকার, নীলফামারী প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি হাতেম আলী, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় প্রমুখ।

ডিমলা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গ্রামগুলোর বেশির ভাগ বাড়ি ও ফসলি জমি পানিতে ডুবে আছে। রাস্তাঘাটও তলিয়ে। এই ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

নিজের বাড়িঘর তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়েছে ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের রহিমা বেগমের (৮০)। আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘চার ছেলে বউ নিয়া হামরা বান্দদ আছি। ছাওয়ালার কামকাজ নাই, খুব কষ্টে আছি। হামার জমিজমা পানিত ডুবি গেইছে, আবাদ সুবাদ কিছুই হয়ছে না। কয় দিন আগত ৫ কেজি চাউল পাছি, ওই চাউল শেষ হয়া গেইছে। তোমরা এইলা দিনেন, মোর খুব উপকার হইল। কয় দিন চলা যাইবে।’

ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের ইয়াছিন আলীর (৬০) বাড়িঘর সব গ্রাস করেছে তিস্তা নদী। সহায়–সম্বলহীন হয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন মেয়েজামাইয়ের বাড়িতে। সেখানেও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি। তাই মেয়েজামাইয়ের সঙ্গে তিস্তা ডান তীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এ সময় ইয়াছিন আলী বলেন, ‘নদীত মোর সব শ্যাষ হয়া গেইছে। বেটির বাড়িত থাকো, সেঠেও বানের পানি উঠছে। এলা সবায় মিলি বান্দদ আছি। জামাইরও কাম কাইজ নাই, হামার খিব কষ্ট হইছে। কাঁহো হামাক ইলিপও দেয় না। না চাইতে তোমরা দিনেন, তোমার জইন্যে দোয়া করমো।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।