'এহুন কী খামু, ক্যামনে চলমু'

সিরাজগঞ্জের বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। ছবি: প্রথম আলো

যমুনা নদীর ভাঙা-গড়ার মধ্যেই জীবন চলে তাঁদের। নদীর একূল ভাঙলে ওকূলে গিয়ে ঠাঁই নেন। এভাবেই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সারা জীবন কষ্ট করেও অভাব পিছু ছাড়ে না তাঁদের। তাঁদেরই একজন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার যমুনাপারে চর রান্ধুনীবাড়ি গ্রামের কুলসুম বেগমের (৫৫) চার সন্তানসহ ছয়জনের সংসার। স্বামী তাঁতশ্রমিক, আগে কাজ করে কোনোরকমে চালিয়ে নিয়েছিলেন। এখন দুই বেলার খাবারই জুটছে না ঠিকমতো। একে তো করোনাকালে কাজ নেই, এর মধ্যেই বন্যার পানিতে ডুবেছে বসতবাড়িটাও।

গত মঙ্গলবার বিকেলে জেলার বেলকুচি উপজেলায় যমুনা নদীর তীরে রান্ধুনীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত ১০০ নারী ও পুরুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ নিতে এসে কুলসুম বেগম শোনালেন জীবনের কষ্টের গল্প। বললেন, ‘যমুনা নদীত চাইরবার গরবাড়ি বাইঙ্গ্যা গেছে। এহুন চরে কোনোরহমে গর তুইল্যা থাহি। বানের পানিত আমরাই আগে ডুবি। এ্যাহুন কী খামু, ক্যামনে চলমু।’

চর রান্ধুনীবাড়ি গ্রামটি যমুনার শাখানদীর ওপারে অবস্থিত। যমুনার ভাঙন, করোনাকালের কর্মহীনতা এবং সম্প্রতি চলমান পরপর দুই দফা বন্যায় মানুষগুলো চরম কষ্টে দিন পার করছেন। খাবারের সংকট ঘরে ঘরে। গত রবি ও সোমবার প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা নৌকায় যমুনা পার হয়ে রাজাপুর ইউনিয়নের চর রান্ধুনীবাড়ি, চক মকিমপুর, আগুড়িয়া ও রাজাপুর গ্রামে গিয়ে দুস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করেন। মঙ্গলবার ত্রাণ দেওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় চাল, আটা, আলু, লবণ ও তেলের একটি করে প্যাকেট। এ সময় সমাজকর্মী আকরাম হোসেন, সিরাজগঞ্জ প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা আবুল কাশেম, সভাপতি আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চক মকিমপুর গ্রামের হালিমা বেগম (৫৮) বলেন, তাঁর স্বামী প্রায় তিন বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায়। ছেলে তাঁতশ্রমিক। করোনা, সেই সঙ্গে বন্যায় রোজগার বন্ধ। ঘরে জমানো যা ছিল, এরই মধ্যে তা-ও শেষ হয়ে গেছে। এখন কী খাবেন, কী করবেন, সেই চিন্তা। প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে কয়েক দিন চলতে পারবেন। এরপর কী হবে, তা জানেন না।

ত্রাণ পেয়ে চর রান্ধুনীবাড়ি গ্রামের রিকশাচালক আকরাম হোসেন (৪৫) বলেন, ‘করোনাত বাইরে বারান যায় না। দুই সপ্তা ধইরা পানির মদ্দ্যেই খুব কষ্টে আছি। কারোই কোনো সাহায্য পাই ন্যাই। আপনেগোরে সাহায্যে আমার মেলা উপকার ওইল।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।