'হাত-পা আলা সুস্থ লোকেরই কাম নাই, আমাক নিব কে'

লালমনিরহাটে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সকালে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের খারুয়ার চর গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
লালমনিরহাটে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সকালে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের খারুয়ার চর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ক্র্যাচে ভর দিয়ে এসেছিলেন ফকির চান (৩০)। ডান পা জন্ম থেকেই অবশ। এভাবেই হাতের কাজ করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা ও বন্যায় একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

লালমনিরহাট সদরের ধরলা নদীবেষ্টিত দুর্গম খারুয়ার চর গ্রামের ১০০ জন বানভাসির মধ্যে গতকাল সোমবার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। খারুয়ার চর বন্যা আশ্রয়ণকেন্দ্র ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অন্যদের সঙ্গে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন ফকির চানও। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘অন্য সময় হালকা হাতের কাম কইরা কিছু আয়রোজগার হইত, এখন করোনা আর বন্যায় সব বন্ধ। হাত-পা আলা সুস্থ লোকেরই কাম নাই, আমাক নিব কে।’

লালমনিরহাট শহর থেকে উত্তর–পূর্ব দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরে খারুয়ার চর। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা গতকাল সকালে লালমনিরহাট শহর থেকে ট্রাকে করে ত্রাণসামগ্রী মোগলহাটের বুমকা ধরলা নদীর ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যান। সেখান থেকে নৌকায় খারুয়ার চর ঘাট। ঘাটে নামার পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী নেওয়া হয় স্থানীয় বন্যা আশ্রয়ণকেন্দ্রে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, লবণ ও তেল।

গতকাল খারুয়ার চরে ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায়, মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খন্দকার প্রমুখ।

এ সময় লালমনিরহাট সদরের ইউএনও উত্তম কুমার রায় বলেন, করোনা সংকটকালে ও বন্যার এ সময় দুর্গত মানুষের পাশে প্রথম আলো ট্রাস্টের এ ত্রাণ–সহায়তা কার্যক্রম মানবিক ও নাগরিক দায়িত্ব পালনের উদাহরণ।

ত্রাণ পেয়ে খারুয়ার চরের মৃত ওসমান আলীর স্ত্রী রহিতন বেওয়া (৬৫) বলেন, ‘এহন বন্যা, আমি তো দূরে যাবার পাই না, বাড়িত খায়া না খায়া থাকি। প্রথম আলোর থাকি চাইল–ডাইল পায়া খুব ভালা হইল।’

খারুয়ার চরের জয়নাল আবেদিন ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু প্রথমে করোনা এবং এর পরে বন্যায় উপার্জন একেবারে কমে গেছে। নিজেদের এবং জীবিকার ঘোড়াগুলোর খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। জয়নালের স্ত্রী মালেকা বেগম ( ৪০) বলেন, ‘স্বামীর কামাই নাই। খায়া-না খায়া থাকি। তোমারগুলার রিলিফ পায়া খুব উপকার হইল।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।