প্রথম আলো ট্রাস্টের যে কটি প্রধান কর্মসূচি রয়েছে, তার মধ্যে অদম্য মেধাবী তহবিল অন্যতম। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সুবিধাবঞ্চিত যে শিক্ষার্থীরা জীবনসংগ্রামের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেন, তাঁদের সাফল্যের কাহিনি নিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত সংবাদ পাঠাতে থাকেন। প্রথম আলো তাঁদের বলেছে 'অদম্য মেধাবী'। পরে প্রথম আলো অদম্যদের নিয়ে শুধু সংবাদ প্রকাশেই সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁদের নিয়ে কিছু করার কথা ভাবে। সেই ভাবনা থেকেই নেওয়া হয় অদম্য মেধাবীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির উদ্যোগ। প্রথম আলো ট্রাস্ট ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অদম্যদের শিক্ষাবৃত্তি চালু করে। ওই বছর ২১ জন অদম্য মেধাবীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে এসব অদম্য মেধাবীকে ঢাকায় সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়। ২০১০ সাল থেকে ব্র্যাক ব্যাংক এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এই কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রথম দিকে শুধু এইচএসসি পর্যায়ের অদম্য মেধাবীদের দুই বছরের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হতো। পরে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া অদম্য মেধাবীদের মধ্যে যাঁরা এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পাবেন, তাঁদের উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যক্তি পর্যায়ের সহায়তায় মোট ৬৫৬ জন দরিদ্র শিক্ষার্থী এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিল গঠিত হয় ২০০০ সালের ১৯ এপ্রিল। ‘আর একটি মুখও যেন অ্যাসিডে ঝলসে না যায়’ অঙ্গীকার নিয়ে প্রথম আলো অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন, ফিচার, সম্পাদকীয় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে থাকে। যেখানে অ্যাসিড-সন্ত্রাস, সেখানেই প্রতিরোধ। অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের সহায়তা দিচ্ছে ‘অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিল’। প্রথম আলোর সাংবাদিকদের এক দিনের বেতন দিয়ে এই তহবিলের যাত্রা শুরু হয়। তবে মূলত তহবিলটি চলছে প্রথম আলোর পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায়। এই পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যেমন ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান আছে, তেমনি আছে স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট ছেলেমেয়ে এবং পোশাকশিল্পের কর্মী। অনেকেই আছেন, যাঁরা তহবিলে সহায়তা করেন কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চান না। বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে পাঠকেরা প্রথম আলোর এই তহবিলে যে সহযোগিতা করেন, তা দিয়ে প্রথম আলো সহায়ক তহবিল অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার নারীদের পুনর্বাসন, শিক্ষাবৃত্তি, চিকিত্সা ও আইনি সহায়তা দিয়ে চলেছে । এই তহবিলের মাধ্যমে ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৬ জন অ্যাসিডদগ্ধ নারীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ জনকে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ, ১০০ জনকে চিকিত্সা সহায়তা, ১২ জনকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং সৌন্দর্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ২৩ জনকে। এ ছাড়া শিক্ষা সহায়তা ১৭ জনকে, মাসিক ভাতা পাচ্ছেন ৪ জন, আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৪ জনকে।
সর্বনাশা নেশার চোরাস্রোতে তলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের তরুণ সমাজ। মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা, কিন্তু সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। মাদক পাচার এবং মাদকাসক্তির হার কমানোর জন্য সীমিত আকারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকার। সরকারকে সম্ভাব্য সব রকমের সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ। তবে এ পাপের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য আজ জরুরি হয়ে পড়েছে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ, মাদকের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও মাদকের ভয়াল থাবা থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে কাজ শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। প্রথম আলোর ট্রাস্টের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে মাদকবিরোধী আন্দোলন একটি অন্যতম। মাদকবিরোধী আন্দোলন বছরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। অনুষ্ঠানসমূহের মধ্যে প্রতি মাসে মাদক পরামর্শ সহায়তা, গোলটেবিল, শোভাযাত্রা, মানববন্ধন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাদকবিরোধী বন্ধুমেলা, কনসার্টসহ ২৬ জুন বিশ্ব মাদকমুক্ত দিবস উপলক্ষে সারা দেশে ব্যাপক আয়োজন। প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলনের স্লোগান ‘মাদককে না বলো’। অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মাদকসংক্রান্ত রিপোর্ট, ফিচার, বিজ্ঞাপন, সম্পাদকীয় ও চিঠিপত্র প্রকাশ করা হয়, যা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে। উদ্যোগটি সামনে রেখে গত ১৮ বছরে প্রায় প্রতি মাসেই পরামর্শ সহায়তা সভা আয়োজিত হয়েছে, এছাড়া মাদকবিরোধী কনসার্ট হয়েছে ১৭টি। তা ছাড়া প্রথম আলো কার্যালয়ের একটি নির্ধারিত টেলিফোন নম্বরে মাসে একবার মাদক নিরাময় বিষয়ে পরামর্শ দেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। একই সঙ্গে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিবছর মাদকবিরোধী সেরা প্রতিবেদন পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বর্তমানে ৫টি স্কুল পরিচালনা করছে। অবহেলিত এসব এলাকার শিশুরা শিক্ষার পরিবর্তে অল্প বয়সেই বিভিন্ন কায়িক শ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ত। এর পেছনে অসচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব ছিল একটা বড় কারণ। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় এসব দুর্গম এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে যাচ্ছে সবার মধ্যে, আলোকিত হচ্ছে পিছিয়ে পড়া এসব মানুষ। তাছাড়া বিদ্যালয়গুলোকে ঘিরে ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, সরস্বতী পূজা, বার্ষিক খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। তখন গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয়। বিদ্যালয়গুলোকে ঘিরে গ্রামের মানুষ এক হয় যা সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ায় এবং সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে কুড়িগ্রামে ১টি, রাজশাহীতে ২টি, ভোলায় ১টি ও নওগাঁয় ১টি করে মোটা ৫টি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। পাঁচটি স্কুলে ৭০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য গঠিত হয়েছে ত্রাণ তহবিল। সিডর, আইলা, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে অথবা শীতার্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় প্রথম আলো । ২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে সিডর আঘাত হেনেছিল । ত্রাণকাজের জন্য প্রথম আলোর তহবিলে জমা পড়ে ৩ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫১২ টাকা। পুরো টাকা সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আইলা আঘাত হেনেছিল, তখন তহবিলে জমা পড়ে ৪৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৪ টাকা যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। আইলায় বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর সিংহড়তলী এলাকার উপকূলে প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছরই শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে ঘটে যাওয়া শতাব্দীর ভয়াবহতম ভবন বিপর্যয় সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৪ পোশাককর্মী নিহত হন। ভবনটিতে কর্মরত মোট তিন হাজার ৬৩৯ জন শ্রমিকের মধ্যে আহত হন দুই হাজার ৪৩৯ জন এবং এখনো নিখোঁজ ১১৬ জন। ঘটনার প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বন্ধুসভা ওষুধ ও সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোতে কাজ শুরু করেন। ২৬ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠানে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকেল থেকেই ছিল শোকের পরিবেশ। ওই দিনের অনুষ্ঠানটিকে সাভার দুর্গতদের জন্য উৎসর্গ করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় একটি সহায়তা তহবিল গঠনের। প্রথম আলোর সাংবাদিক ও কর্মীদের এক দিনের বেতন দুই লাখ টাকা দিয়ে তহবিল শুরু হয়। এরপর স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ঘোষণা করেন ১০ লাখ টাকা অনুদানের কথা। ওই অনুষ্ঠানেই শিল্পী ও কলাকুশলীদের অনুদান যোগ হয়ে মোট ৫৪ লাখ টাকা দিয়ে ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’ গঠিত হয়। পরে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তহবিলে সহায়তা প্রদান করেন। তহবিলে জমা পড়া অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা, চিকিত্সা, শিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়েছে। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য এ তহবিল গঠন করা হয়। এই তহবিলের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনায় পতিত এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য খাবার, স্প্রে, অক্সিজেন ও পানি সরবরাহ করা হয়। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে, গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পুনর্বাসনের জন্য ১০১ জনের প্রত্যেককে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া রানা প্লাজায় নিহত ব্যক্তিদের ২০ জনের সন্তানদের শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পর্ব পর্যন্ত এই সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রথম আলো ট্রাস্ট-সাদত স্মৃতি পল্লী প্রকল্পে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ওষুধ বিতরণ করা হয়। দড়ি হাইরমারা গ্রাম ছাড়াও খোদাদিলা,বীরকান্দি,নীলক্ষা,বাহেরচর, আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দড়ি হাইরমারা গ্রামে এই প্রকল্পের অবস্থান। এনভয় গ্রুপের সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট প্রকল্পটি পরিচালনা করছে । নিয়মিতভাবে যে সেবাসমূহ দেওয়া হচ্ছে তা হলো। ক) গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সপ্তাহে ২ দিন ৩ জন চিকিত্সক দ্বারা এই চিকিত্সা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহে ১০৫ জন রোগীকে এই সেবা দেওয়া হয়। খ) মোট ৫৬ জন বয়স্ককে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। গ) অত্র অঞ্চলের শিশু, কিশোর, যুবকদের পাঠ অভ্যাস এবং জ্ঞান লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এক লক্ষ টাকার বই রয়েছে। দিন দিন পাঠক বাড়ছে। ঘ) গ্রামের শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ‘আরজান –আরিশ’ শিশুপার্ক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে ২ ঘণ্টার জন্য পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ) গ্রামের শিশুদের মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে গল্পের বই পড়ে অভ্যাস, ছবি আঁকা ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ক ক্লাস নেওয়া হয়।
প্রথম আলো ট্রাস্ট
সি এ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা- ১২১৫
ফোন: ৮১৮০০৮১,৮১৮৫৩০৭-১০,এক্স-১৬৩০-৩২
ইমেইল: trust@prothom-alo.info
Prothom Alo is the highest circulated and most read newspaper in Bangladesh. The online portal of Prothom Alo is the most visited Bangladeshi and Bengali website in the world.
Privacy Policy | Terms of Use