গিন্সবার্গের মৃত্যু বদলে দিল নির্বাচনী বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ বডার গিন্সবার্গের মৃত্যু আমেরিকার রাজনীতির আলোচনা দ্রুত পাল্টে দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রার্থীরই তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষমতার রাজনীতির ভারসাম্যে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দুই দলের জন্য অপরিহার্য লড়াই হয়ে উঠেছে।
কোনো ঝুঁকি না নিয়েই রিপাবলিকান দল নির্বাচনের আগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ সম্পন্ন করতে চেষ্টা করবে। এদিকে ডেমোক্রেটিক দল নির্বাচন পর্যন্ত নতুন বিচারপতির নিয়োগ ঠেকিয়ে রাখতে চায়। ৮৭ বছর বয়সে ১৮ সেপ্টেম্বর উদারনৈতিক বিচারপতি হিসেবে পরিচিত রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মরদেহ কফিনে রাখার আগেই বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে।
ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, নির্বাচনের আগে কোনো মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে থেকেই রক্ষণশীল বিচারকদের তালিকা ঘোষণা করে রেখেছেন। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা রিপাবলিকান মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, প্রেসিডেন্টের মনোনয়নের পক্ষে নির্বাচনের আগেই সিনেটে ভোট সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীলদের নিশ্ছিদ্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বল্প বয়সের কোনো রক্ষণশীল বিচারকের অভিষেক ঘটতে পারে। ফলে আদর্শিকভাবে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে রক্ষণশীলতার প্রাধান্য চলে আসবে
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করতে পারেন। শারীরিক অবস্থার কারণে বা অন্য কোনো কারণে নিজে থেকে সরে না দাঁড়ালে তাঁদের অপসারণ করা প্রায় অসম্ভব। মার্কিন শাসনতন্ত্রের অন্যতম রক্ষাকবচ সুপ্রিম কোর্টের নয়জন বিচারপতি। রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যুতে রিপাবলিকানদের হাতে এবার সুযোগ এসেছে। তাঁদের ভাবধারার বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আনার সুবর্ণ সুযোগ বলে এখন মনে করছে রক্ষণশীলরা।
যুক্তরাষ্ট্রের গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীলদের নিশ্ছিদ্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বল্প বয়সের কোনো রক্ষণশীল বিচারকের অভিষেক ঘটতে পারে। ফলে আদর্শিকভাবে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে রক্ষণশীলতার প্রাধান্য চলে আসবে।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস রক্ষণশীল ঘরানার হলেও দেশটির অতি রক্ষণশীলরা রবার্টসকে নিজেদের লোক নিশ্চিতভাবে মনে করে না। রবার্টস নিজেও বিচারের রায়ের ক্ষেত্রে বহু সময় উদারনৈতিক অবস্থানের পরিচয় দিয়েছেন। এবারের পরিবর্তনের মধ্যে আগামী অন্তত ৩০ বছর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রক্ষণশীলদের কবলে চলে যেতে পারে।
মার্কিন সমাজে প্রজনন অধিকার, বৈষম্য প্রতিরোধ, অপরাধ, বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা, অভিবাসীদের অধিকার, কর আইন, নাগরিক আইন, স্বাস্থ্যসেবাসহ হেন বিষয় নেই যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ওপর নির্ভর করতে হয় না। প্রতিনিয়ত এ সুপ্রিম কোর্ট ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় উদারনৈতিকদের পক্ষে রায় দিয়ে আসছিলেন। এ ধরনের প্রায় সবগুলো রায়ে রুথ গিন্সবার্গ নিশ্চিতভাবে উদারনৈতিকদের পক্ষে ছিলেন।
মার্কিন সিনেটে এখন রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তড়িঘড়ি করে অতি রক্ষণশীল কোনো বিচারকের নাম ট্রাম্প প্রস্তাব করতে পারেন। তাঁর দলের সব সিনেটরদের সমর্থনই এখন পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। আসছে ৩ নভেম্বর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সিনেটে রিপাবলিকান দল কোনো আসন হারালে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচনের লড়াইয়ের চেয়েও রুথ গিন্সবার্গের মৃত্যু এখন নতুন লড়াই সামনে হাজির করে দিয়েছে। এ লড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ও রাজনীতির রক্ষণশীলতা আর উদারনৈতিকতার লড়াই। এ লড়াইয়ে সহজে কোনো পক্ষই ছাড় দেবে না।
সিনেটে এখন রিপাবলিকান সদস্য ৫৩ জন, ডেমোক্র্যাট ৪৫ জন এবং স্বতন্ত্র দুজন। রিপাবলিকান দলের অন্তত দুজন সিনেটর এর মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা তড়িঘড়িতে নেই। তার মানে এখনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো মনোনয়ন দিলে, এঁদের পক্ষে পাওয়া দুরূহ হবে। অন্য দুই-একজনও বিগড়ে বসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৮ সেপ্টেম্বর রাতেই জো বাইডেন বলেছেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করবে এবং তখনই প্রেসিডেন্ট বিচারপতি মনোনয়ন দেবেন। ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে রিপাবলিকান দল তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বিচারপতি নিয়োগে বাধা প্রধান করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই বিচারপতি মনোনয়ন দেওয়া হয়।
পরিষ্কার করে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করবে এবং তখনই প্রেসিডেন্ট বিচারপতি মনোনয়ন দেবেন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিচারব্যবস্থায় রক্ষণশীল বিচারকদের তালিকা প্রদানের জন্য কিছুদিন আগে আহ্বান জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের সম্ভাব্য বিচারপতির জন্যও তিনি নাম ঘোষণা করে রেখেছেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমেই তাঁকে বিচারকের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হবে। সিনেটের সব রিপাবলিকান সদস্য তাঁর পক্ষে নিশ্চিত হয়েই তিনি তা করবেন। নির্বাচনের জন্য তাঁর রক্ষণশীল ভিত্তিকে আরও চাঙা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তত মনোনয়ন ঘোষণা করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সিনেটে ডেমোক্রেটিক দলের নেতা চার্লস শুমারও বলে দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে কোনো বিচারপতি মনোনয়নের পক্ষে তিনি নেই। রিপাবলিকান দলকে তিনি তাঁদের ২০১৬ সালের অবস্থান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনের পর বিচারপতি নিয়োগের কথা বলেছেন সিনেটর চার্লস শুমার।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিচারব্যবস্থায় রক্ষণশীল বিচারকদের তালিকা প্রদানের জন্য কিছুদিন আগে আহ্বান জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের সম্ভাব্য বিচারপতির জন্যও তিনি নাম ঘোষণা করে রেখেছেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমেই তাঁকে বিচারকের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হবে
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, নতুন বিচারপতি নিয়োগের সময় সদ্য প্রয়াত বিচারপতি রুথ গিন্সবার্গের উদারনৈতিকতা ও ন্যায় বিচারের উত্তরাধিকারকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সব মিলে নির্বাচনের আগে আগামী ছয় সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী মাঠে নতুন বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি চাঙা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।