আকাশে একমুঠো স্বপ্ন 'ড্রিমলাইনার'
আকাশভ্রমণে আরাম চাই? তা আছে পুরোমাত্রায়। শুধু আরামই নয়, চাইলে প্রিয়জনের সঙ্গে দূরালাপনের সুযোগও আছে। ঘরের নগদ খবর নিতে নিতে চলে গেলেন দূরদেশে। আপনজনকে জরুরি যে কথা বলে আসা হয়নি বলে ছটফট করছিল মন, সে খেদ আর রইল না। ফুরফুরে মেজাজে নেমে গেলেন গন্তব্যে।
আকাশপথে এমন স্বপ্নবিলাস সার্থক করতে আধুনিক মডেলের নতুন উড়োজাহাজ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ বিমান। এ জন্য বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজকে বেছে নিয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী এই বিমান সংস্থা।
বিমানবহরে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০। ভাড়ায় নেওয়া দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, একটি এয়ারবাস এ৩৩০, দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ। তবে ১৩টি উড়োজাহাজ দিয়ে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ৭টি আকাশপথে চলাচল করছে বিমান। আর অত্যাধুনিক বলতে কেবল রয়েছে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ।
কিন্তু আকাশচারীদের স্বপ্ন দেখানোর জন্য এসব উড়োজাহাজে ‘যথেষ্ট’ সুবিধা নেই। তাই বিমানের হয়ে ডানা মেলতে যাচ্ছে নতুন উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। চারটি ড্রিমলাইনার আসছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। এর মধ্যে প্রথম সর্বাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে এ বছরের আগস্টে। দ্বিতীয়টি আসছে এর তিন মাস পর নভেম্বরে। বাকি দুটি ড্রিমলাইনার চলে আসবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে।
চারটি ড্রিমলাইনারে থাকবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি—এমনটিই দাবি বিমান কর্তৃপক্ষের। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যেতে পারবে স্টেট অব দ্য আর্ট প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার। আকাশের এত উঁচু দিয়ে উড়বে, কিন্তু চেনা জগৎটা থাকবে নাগালেই। বরং গোটা বিশ্বই যেন তাঁদের মুঠোবন্দী থাকবে। ড্রিমলাইনারে বসে ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যাবে। এ সুবিধা এখন পর্যন্ত দিচ্ছে বিশ্বের ৫৪টি বিমান সংস্থা। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু শ্রীলঙ্কান এয়ালাইনসে এ সুবিধা পাওয়া যায়। এতে চাইলেই যখন-তখন আপনজনের কাছে ফোন করা যাবে। এ জন্য বিশেষ একধরনের ফোনসেট দেওয়া হবে যাত্রীদের। ফোনে কথা বলা শেষ, ইচ্ছে করছে সিনেমা দেখার—সে সুযোগও আছে। ড্রিমলাইনারে থাকছে বিশ্বমানের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (আইএফই)। এর মাধ্যমে ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র দেখা যাবে। বিভিন্ন ধরনের সুর-সংগীত শোনা তো যাবেই। ভিডিও গেমসও আছে। এর পাশাপাশি বিশ্বসেরা নয়টি টিভি চ্যানেলের রিয়াল টাইম লাইভ দেখা যাবে।
ড্রিমলাইনারে শুল্কমুক্ত পণ্য কেনা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে জুয়েলারি সামগ্রী, পারফিউমসহ নানা পণ্য। নোট না থাকলেও যাত্রীদের সমস্যা নেই। ক্রেডিট কার্ডেও পণ্য কেনা যাবে।
রাতের বেলা যখন ড্রিমলাইনার চলতে থাকবে আকাশে, তখন এর কেবিন থাকবে শান্ত-নির্জন। মুড লাইট সিস্টেমের কারণে আকাশচারীদের মনে হবে, চোখের সামনে নক্ষত্ররা যেন জ্বলছে মিটমিট করে।
মোট ২৭১ জন যাত্রী বহন করতে পারবে ড্রিমলাইনার। এর মধ্যে ২৪টি আসন বিজনেস ক্লাসের। এসব আসন ১৮০ ডিগ্রি বাঁকিয়ে বিছানার মতো করা যাবে। একটি আসন থেকে আরেকটি পুরোপুরি আলাদা থাকবে।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য প্যানাসনিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে । যাত্রীরা এই সুবিধা ব্যবহার করে কথা বলতে পারবেন। অন্যান্য উড়োজাহাজের চেয়ে ২০ শতাংশ জ্বালানি-সাশ্রয়ী এই ড্রিমলাইনার। এর ককপিট হবে পেপারলেস। পাইলটরা আইপ্যাড ব্যবহার করে উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষণ করবেন। বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, ঢাকায় বিমানের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ড্রিমলাইনারের যোগাযোগ থাকবে সব সময়। ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ চলে এলে বিমান ডানা মেলবে নতুন নতুন গন্তব্যে। এর মধ্যে চীনের বাণিজ্যিক নগর গুয়াংজু, শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো এবং মালদ্বীপের রাজধানী মালের পথে উড়বে বিমান। ২০১৯ সালে আরও দুটি ড্রিমলাইনার চলে আসার পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, কানাডার মন্ট্রিল ও জাপানের টোকিওতে উড়াল দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে বিমানের।