দ্রুত বড়লোক হতে মাদক ব্যবসায় দুই ভাই

আপন দুই ভাই মো. আলম (৪০) ও মো. জসিম উদ্দিন (২৩), তাঁদের বাড়ি কক্সবাজারে। বড় ভাই আলমের স্বপ্ন ছিল অল্প সময় বড়লোক হবেন। আর এ জন্যই বেছে নেন ইয়াবা ব্যবসাকে। ব্যবসায় জড়ান ছোট ভাইকেও। রাজধানীতে নিজে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকছিলেন। ছোট ভাইকে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন। নিজের ফ্ল্যাটে জসিম ইয়াবা বিক্রি করতেন, আবার সেখানেই নিরাপদে ইয়াবা সেবনের জায়গাও করে দেন তিনি।

এভাবেই চলছিল জমজমাট ইয়াবা ব্যবসা। দুই ভাইয়ের এই ব্যবসা ধরে ফেলে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডি থেকে আটক করা হয় দুই ভাইসহ মো. সালাউদ্দিন (২৭) ও মো. মিজানুর রহমান (৩৩) নামের দুই সহযোগীকে। উদ্ধার করা হয় ১ লাখ ২৩ হাজার পিস ইয়াবা ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-২–এর সিইও আনোয়ার উজ জামান। তিনি বলেন, আটক ইয়াবার দাম প্রায় চার কোটি টাকা। এ ছাড়া ইয়াবা বিক্রির নগদ ৮১ হাজার টাকা, সাতটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। আটক আলমকে তিনি ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে পরিচয় দেন।

ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চারজনকে আটক করে র‍্যাব। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চারজনকে আটক করে র‍্যাব। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

আনোয়ার উজ জামান বলেন, আলম জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তাঁর এলাকার বন্ধুদের সহযোগিতায় চিংড়ির পোনা ব্যবসা, কটেজ ভাড়া, জমির ব্যবসা করে কিছুটা উন্নতি হলে ইয়াবায় আসক্ত হন। একপর্যায়ে মিয়ানমারের এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।

পরবর্তী সময়ে বড় পরিসরে মাদক ব্যবসার জন্য গাড়ি কেনাবেচার অন্তরালে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে প্রথমে কক্সবাজারের কলাতলী, শামীম গেস্ট হাউসে মজুত করে সেখান থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে ঢাকায় পাঠানো শুরু করেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছেও ইয়াবা সরবরাহ করে আসছিলেন।

আলমের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন ঢাকা কলেজে সমাজবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। লেখাপড়ার খরচ চালাতে মাদক ব্যবসায়ী বড় ভাইয়ের পরামর্শে তিনি তাঁর স্কুল, কলেজপড়ুয়া মাদকসেবী বন্ধুদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিয়মিতভাবে ইয়াবা সরবরাহ করতেন এবং মাদকের আসর বসানোর জন্য আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।

এ ছাড়া মো. সালাউদ্দিন মোটরগাড়ির গ্যারেজে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করার সুবাদে মাদক ব্যবসায়ী আলমের সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাঁর সহযোগী হিসেবে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। মিজানুর রহমান উখিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসের চালক হিসেবে কাজ করার সুবাদে আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে বাড়তি আয়ের আশায় মাদক পরিবহন ও ব্যবসার কাজে জড়িয়ে পড়েন।

র‍্যাব জানায়, আটক ব্যক্তিদের আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।