নুহাশের '৭০০ টাকা'

>আজ মুক্তি পাচ্ছে নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ৭০০ টাকা। এতে অভিনয় করেছেন সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান ও অভিনয়শিল্পী সাবিলা নূর। গত সোমবার এই তিনজন এসেছিলেন প্রথম আলোয়। বলেছেন ছবির গল্প। লিখেছেন হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক

প্রথম আলো কার্যালয়ে ঢুকতে গিয়ে অতিথি হিসেবে প্রীতম যে কার্ডটি হাতে পেলেন, তার সিরিয়াল নম্বর ১৩। লিফটে উঠে যে বোতামটা চাপলেন, সেটার নম্বর ১৩। অর্থাৎ নামবেন ১৩ তলায়। আর প্রথমবার নিজের অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ৭০০ টাকা, সেটাওমুক্তি পাচ্ছে সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখে। তিন ‘১৩’-এর কাকতালীয় মিলের পাশে দাঁড়ানো চলচ্চিত্র নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু একটা বললেন তিনি। তাতে দুজনই মাপা লিফটে চাপা হাসি দিলেন। লিফট থেকে নেমে দুজন হেসে নিয়ে বললেন এই ১৩ ঘটিত আসল রহস্য।

আনলাকি থার্টিন?

ছবিটির নাম ৭০০ টাকা। বানিয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন। ২০ মিনিটের এই চলচ্চিত্র আজ রাত ৯টায় মুক্তি পাচ্ছে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির ভিডিও দেখার অ্যাপস আইফ্লিক্সে। শুটিং হয়েছে ঈদুল আজহার আগে। এই ছবি নিয়ে কথা বলার জন্য ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন ছবির প্রধান দুই অভিনয়শিল্পী প্রীতম হাসান ও সাবিলা নূর। সঙ্গে ছিলেন পরিচালক স্বয়ং। তিনজনই এই সময়ের প্রতিনিধি। চলচ্চিত্রের গল্পও কি তাহলে এই সময়ের?

আড্ডায় বসে সে রকম ইঙ্গিত দিলেন পরিচালক নুহাশ। বললেন, ‘আমি অনেক দিক থেকে লাকি (সৌভাগ্যবান)। প্রীতমের মতো গায়ক ও অভিনয়শিল্পী পেয়েছি, সাবিলার মতো মেধাবী অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, চিত্রনাট্য ছাপিয়ে তাঁরা অভিনয়টা দুর্দান্ত করেছেন। এ কারণেই আমি লাকি। মোটেই আনলাকি নই।’

এত এত ১৩ মিলে যাওয়ার পরও যে পরিচালক নিজেকে ‘লাকি’ বলেন, সেটা আসলে অন্য রকম নির্ভরতার মতো শোনায়। সেটা শুনতে শুনতে সাবিলা বলেন অন্য গল্প।

চিত্রনাট্যে বাজিমাত

তখন একের পর এক ঈদের নাটকের শুটিংয়ের চাপ। এই সময়ই একটা চিত্রনাট্য আসে সাবিলার কাছে। যে চিত্রনাট্যের ওপর রচনা ও পরিচালকের নামের জায়গায় নুহাশ হুমায়ূনের নাম লেখা। কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহটা বেড়ে যায়। তবে সব আগ্রহ বারুদ হয়ে জ্বলে ওঠে পুরো চিত্রনাট্য পড়ার পর। সাবিলা বললেন, ‘এই স্টাইলে চিত্রনাট্য আমি কখনো পাইনি। দেখেই মুগ্ধ হই। পড়তে পড়তে আরও মুগ্ধতা বেড়ে যায়। আমি তখনই হ্যাঁ বলে দিই। আমি বুঝি, এটা আমাকে করতেই হবে।’

একই অবস্থা প্রীতমেরও। গানের মানুষ। নুহাশ যোগাযোগ করলে ধারণা করেছিলেন, গানই গাইতে হবে। কিন্তু বিধি বাম! ‘অভিনেতা’ হিসেবে মিউজিক ভিডিওতে উপস্থিতি আর গাঁটের শেষ সম্বল দুটি নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে কে জানত, তাঁকেই মাঠে নামতে হবে পুরোদস্তুর অভিনেতা হয়ে। তা-ও নুহাশের পরিচালনায়! কিন্তু ভয়টা কেটে গেছে তখনই, যখন নুহাশের সঙ্গে প্রথম কথা হয়। ৭০০ টাকা সূত্রেই নুহাশের সঙ্গে প্রীতম ও সাবিলার কথা, আলাপ, আড্ডা, মহড়া এবং অভিনয়। এখন তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ।

৭০০ টাকা ছবির গল্প বলেছেন সংগীতশিল্পী প্রীতম, পরিচালক নুহাশ হুমায়ূন ও অভিনেত্রী সাবিলা নূর। ছবি: কবির হোসেন
৭০০ টাকা ছবির গল্প বলেছেন সংগীতশিল্পী প্রীতম, পরিচালক নুহাশ হুমায়ূন ও অভিনেত্রী সাবিলা নূর। ছবি: কবির হোসেন

‘৭০০ টাকা’য় কী পাওয়া যাবে?

প্রশ্ন রাখি, ৭০০ টাকায় কী পাওয়া যাবে? মানে, দর্শক কেন দেখবে ৭০০ টাকা। নুহাশ একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দেন, ‘এটা আমার এক রাত্রে লেখা চিত্রনাট্য। আমাকে যখন আইফ্লিক্স থেকে বলা হয়, তখনই লিখতে বসি। এটা প্রথম ও একমাত্র ড্রাফট। ছবির গল্পটা এমন, ৭০০ টাকা নিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে এক তরুণ। এই টাকার মধ্যেই প্রেমিকার আবদার রক্ষা করতে হবে। কীভাবে ম্যানেজ করবে সবকিছু—সেটাই দেখা যাবে ছবিতে।’

তাহলে তো কমেডি ছবি বলা যায়? নুহাশ ওপরে-নিচে মাথা নাড়েন। ‘তা বলতে পারেন। কিন্তু এটা জোর করে হাসানোর মতো না।’ পাশ থেকে প্রীতম জোর গলায় বলেন, ‘এটা দেখে মানুষ হাসবেই। এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।’ প্রীতমের সঙ্গে গ্যারান্টি দিলেন সাবিলাও। কিন্তু নুহাশ আমতা আমতা করতে থাকলেন। কে জানে নুহাশ তখন বাবা হুমায়ূন আহমেদের কোনো নির্মাণের কথা ভাবছিলেন কি না!

কেন প্রীতম ও সাবিলা?

২০১৭ সালের ঈদে প্রচারিত হয়েছিল নুহাশ হুমায়ূনের প্রথম নাটক হোটেল অ্যালবাট্রস। নুহাশের ভাষায় সেটা ছিল একটা ‘সিরিয়াস’ গল্প। মাঝে আরও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। কাজ শেষ করেছেন ১১ জন নির্মাতার সঙ্গে অমনিবাস চলচ্চিত্র ইতি, তোমারই ঢাকার। সেখান থেকে এক ধাক্কায় ‘কমেডি’ গল্প। ‘আমি আসলে আমার প্রতিটি কাজ নিয়েই নিরীক্ষা করছি। দেখা যাক। তবে আমার আগাগোড়া স্বপ্ন চলচ্চিত্র নির্মাণ।’ বলেন নুহাশ। সেই নিরীক্ষা থেকেই কি গানের মানুষ প্রীতমকে দিয়ে অভিনয়? প্রশ্ন শুনে হাসেন তিনজনই। ততক্ষণে চা, শর্মা ও চপ চলে এসেছে। খেতে খেতে রসিকতা করেই সম্ভবত নুহাশ বলেন, ‘আমাকে এজেন্সি থেকে বলা হয় এমন একজনকে নিতে, যাকে দিয়ে গান ও অভিনয়—দুইটাই করানো যাবে। এটা প্রীতম ছাড়া আর কে করতে পারবে? বলেন!’

প্রীতম হা রে রে করে প্রতিবাদ করে হাত তোলেন। সেটা থামিয়ে দেন সাবিলা। ‘মিউজিক ভিডিওর অর্ধেক তো অভিনয়ই করো তুমি।’ দুজনের ঠোকাঠুকি জমে ওঠে। সেটা থামলে দুজন তথ্য দেন, এই ঠোকাঠুকির বন্ধুত্ব তাদের দুই বছরের। নুহাশ যোগ করেন, এই ছবিতে দর্শক সাবিলার কণ্ঠে গানও শুনতে পাবেন।

সামনে আরও যা

নুহাশ ও প্রীতম মিলে সামনে বেশ কিছু কাজ করবেন। সেগুলো কী? এবার দুজনই মুখে কুলুপ আঁটেন। ভুল হলো, দুজন কোমল পানীয়র বোতলে মুখ আঁটেন। বোতল নামিয়ে নুহাশ বলেন, ‘আপাতত ৭০০ টাকারগল্পই থাক। শুধু এতটুকু বলি, আমরা অনেক কাজের পরিকল্পনা করছি। সেটা সময়মতো সবাই জানবেন।’ সাবিলা থাকবে সে সবে? হেসে ওঠেন নুহাশ, থাকবে তো! প্রীতম পাশ থেকে বলেন, ‘ওর যে কাজের চাপ, সময় পাবে কি না?’

সাবিলা আবারও উত্তেজিত। ‘অবশ্যই থাকব। নুহাশ ভাইয়ের কাজ বলে কথা।’ এই ‘নুহাশ ভাইয়ের কাজ বলে’ কথার জন্যই ৭০০ টাকা সবার দেখা উচিত, এ রকম একটা মতৈক্যে পৌঁছান নুহাশের দুই পাশে বসা বন্ধু এবং শত্রু প্রীতম ও সাবিলা।