মা-বাবাকে খুঁজতে এসে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন মিন্টো

মিন্টোর জন্য ভালোবাসা অনুষ্ঠানের মধ্যমণি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কার্স্টেন সনিক ও তাঁর স্ত্রী অ্যানিটি হোলমিভেন। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা, ১৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান মাহমুদ
মিন্টোর জন্য ভালোবাসা অনুষ্ঠানের মধ্যমণি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কার্স্টেন সনিক ও তাঁর স্ত্রী অ্যানিটি হোলমিভেন। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা, ১৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান মাহমুদ

চার দশক পর মা-বাবা ও স্বজনদের খোঁজে পাবনায় আসা ডেনিশ দম্পতিকে বরণ করে নিয়েছে পাবনাবাসী। ডেনমার্ক থেকে আসা মিন্টো কার্স্টেন সনিক এখনো তাঁর স্বজনদের সন্ধান পাননি। তবে পাবনাবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। আজ শুক্রবার সকালে পাবনা প্রেসক্লাবে ‘মিন্টোর জন্য ভালোবাসা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তাঁদের বরণ করে নেয় ‘আমরা পাবনাবাসী’ নামের একটি সংগঠন।

আয়োজকেরা মিন্টো কার্স্টেন সনিককে পাঞ্জাবির সঙ্গে গামছা এবং তাঁর স্ত্রী অ্যানিটি হোলমিভেনকে শাড়ি পরিয়ে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন। তাঁদের আপ্যায়ন করা হয় পাবনার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ও খাবার দিয়ে। অনুষ্ঠানে একদিকে চলতে থাকে বাংলা গান, অন্যদিকে মিন্টোর রংতুলির কারুকাজ। মিন্টো পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। তিনি জলরঙে আঁকেন নদীর অবয়বের একটি জলছবি। এরপর মিন্টো-অ্যানিটি দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফ্রেমে আঁকা মিন্টো দম্পতির একটি ছবি ও বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

পাবনাবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ মিন্টো কার্স্টেন সনিক বলেন, ‘আমি যখন ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে আসি, তখন অনেকেই বলেছেন যে বাংলাদেশিরা খুব খারাপ, ভয়ানক সন্ত্রাসী। কিন্তু এখন আমার ধারণা পাল্টে গেছে। এ দেশের লোকজন খুবই ভালো। আমি প্রতিবছর পাবনায় আসব, এখানে আমি বাড়িও তৈরি করব। আপনারা আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছেন। আমি আমার স্বজনদের না পেলেও আমি মনে করি আপনারাই আমার আত্মীয়স্বজন।’

স্থানীয় বাসিন্দা তপু আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয়, পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের যাজক ইছাহাক সরকার, পাবনা মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম লিটন, পাবনা ড্রামা সার্কেলের সহসাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মিন্টু যে উদ্দেশ্যে পাবনায় এসেছেন, আমরা তাঁর আবেগকে শ্রদ্ধা করি। আমরা সব সময় তাঁর পাশে আছি এবং থাকব।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কার্স্টেন সনিকের রংতুলির কারিকুরি। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা, ১৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান মাহমুদ
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কার্স্টেন সনিকের রংতুলির কারিকুরি। পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা, ১৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: হাসান মাহমুদ

৪৭ বছরের মিন্টো কার্স্টেন সনিক সাত বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান। হারানো শিশুটিকে ঢাকার ঠাঁটারীবাজার এলাকায় নিয়ে একটি শিশুসদনে রাখেন চৌধুরী কামরুল হুসাইন নামের এক ব্যক্তি। পরে শিশুসদন থেকে ডেনমার্কের এক নিঃসন্তান দম্পতি মিন্টোকে দত্তক নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর শৈশব-কৈশোর কাটে। বিত্তবৈভবের মধ্যে লেখাপড়া শিখে বড় হন মিন্টো। পেশাগত জীবনে তিনি চিত্রশিল্পী। ডেনমার্কের নাগরিক অ্যানিটি হোলমিভেন নামের এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সেখানে সংসার জীবন শুরু করেন মিন্টো। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের ২৩ বছরের মেয়ে ও ১৮ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তিনি নিজের জন্মদাতা মা-বাবাকে ভুলতে পারেননি। তাই তাঁদের সন্ধানে স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন মিন্টো। মা-বাবা ও স্বজনদের খোঁজে ১৫ দিন ধরে পাবনা শহরসহ নগরবাড়ি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন মিন্টু- অ্যানিটি দম্পতি।

পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিন্টোকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর ৪১ বছর পূর্বে নগরবাড়ি ঘাট থেকে মিন্টোকে উদ্ধারকারী চৌধুরী কামরুল হুসাইন অস্ট্রেলিয়া থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি দেশে আসবেন বলেও জানিয়েছেন। দেশে এলে আমরা মিন্টোর প্রকৃত স্বজনদের খুঁজে পাব বলে আশা করছি। তবে এরই মধ্যে নগরবাড়ি এলাকার এক বৃদ্ধ লোক মিন্টোকে তাঁর আত্মীয় দাবি করেছেন। এ জন্য তিনি ডিএনএ টেস্ট করাতেও রাজি হয়েছেন।’