কারাম উৎসবে মাতোয়ারা ওঁরাও

বর্ষায় খাল-বিল ও নদীনালায় পূর্ণতা আসে। গাঢ় সবুজ রং নিয়ে প্রকৃতিতে আসে তারুণ্য। খাল-বিলে ফোটে শাপলা-শালুক। ধান রোপণের পর আদিবাসী সম্প্রদায়ের অফুরন্ত অবসর। ঠিক সেই ভাদ্র মাসে আসে ওঁরাও সম্প্রদায়ের অন্যতম বার্ষিক উৎসব কারাম। বৃক্ষের পূজার উৎসব।
উৎসবে ওঁরাও কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। কামনা-বাসনা করেন, আর চেষ্টা করেন একটু ভালোবাসার। সৃষ্টিকর্তার প্রতি এই নাচ-গান উৎসর্গ করার মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ও পাঁচপীরডাঙ্গা আদিবাসী পল্লিতে উদ্যাপিত হচ্ছে দুই দিনের কারাম পূজা।
কারাম উৎসব উদ্যাপনের জন্য ওঁরাও নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার প্রথম দিন উপোস থাকেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি উৎসর্গ করার পর সেগুলো আমন্ত্রিত অতিথি ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন ওঁরাও নারীরা। পরে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনেন।
এরপর তাঁরা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকেন।
এদিকে পুরোহিতের ধর্মীয় কাহিনি পাঠ শেষ হওয়ার পর উপোস থাকা মেয়েরা পরস্পরকে খাবারে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভেঙে ফেলেন। এর পরই বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া চাল, ডাল ও টাকা দিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়স্বজনদের। শেষে ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে স্থানীয় নদীতে কারামের ডালটি বিসর্জনের মাধ্যমে কারাম উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।