শীত আসছে

প্রতিবছর শীতের মৌসুমের শেষভাগে বিভিন্ন মানবিক সংগঠন, সংস্থা গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান নিয়ে শীতবস্ত্র সংগ্রহের অভিযান শুরু করে। সাধারণত এমন ধরনের অভিযান শুরু হয় যখন দেশে শীতের তীব্রতা দেখা দেয় এবং পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে গরিব-দুঃখী মানুষের চিত্র উপস্থাপন করানো হয় কিংবা শীতের কারণে শিশু ও বয়স্ক লোকের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। এটি একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে শীতের মৌসুম শুরু হলেও শীতের তেমন তীব্রতা না থাকায় আমাদের মধ্যে এখনো মানবিকতাবোধও জাগ্রত হতে শুরু করেনি। পাড়ায়-মহল্লায়, অলিগলিতে পুরোনো কাপড় সংগ্রহের মাইকিংও শুরু হয়নি। আমাদের দেশে প্রচুর স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারাও শুরু করে শীতের শেষ ভাগে। বিভিন্ন পোস্টারসংবলিত মানবিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে থাকবে চিঠি ও ই-মেইলের মাধ্যমে।
প্রশ্ন হলো, আমরা কেন সময় থাকতে শুরু করছি না। কেন সময় থাকতে চিহ্নিত করছি না অধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অঞ্চলগুলোকে। কেন আমরা বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে এখনই সমন্বয় সাধন করছি না।
শীতবস্ত্র বিতরণ আর শহর অঞ্চলের বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য আমি দেখি না। রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ তখনই শুরু হয় যখনই বর্ষা এসে মেরামতের কাজকে আরও বৃহৎ করতে সাহায্য করবে এবং জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি করবে। অনুরূপভাবে আবহাওয়া অফিস শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতার খবর না দেওয়ার আগ পর্যন্ত শীতার্থ মানুষের মধ্যে সহায়তার হাত বাড়ানো আমাদের হয়ে ওঠে না।
অন্যদিকে শীতের খবর পত্রপত্রিকাগুলোকে সব সময় উত্তরবঙ্গের কিংবা সমতলের চিত্র উপস্থাপন করতে দেখা যায়। যেখানে খুব কম খবর উপস্থাপিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের শীতের তীব্রতার কথা আমরা অনেকে জানি না।
শহর অঞ্চলে গরিব জনগোষ্ঠী অল্প খরচে শীতের গরম কাপড় সংগ্রহ করতে পারলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারীদের পক্ষে শীতের গরম কাপড় সংগ্রহ করা মোটেও সহজ নয়।
যেমন: বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলায় শীতের গরম কাপড় বিক্রেতা দেখা যায় না বলেই চলে (ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রেতা)। বান্দরবান জেলা সদরে গিয়ে যাদের পক্ষে ক্রয় করাও অসম্ভব, কেননা শুধু পরিবহন বাবদ ভাড়া দরকার হয় প্রায় ৪০০ টাকা। তাও আবার শুধু উপজেলা সদর থেকে জেলা সদর পর্যন্ত ভাড়া হিসেবে আনলে। উপজেলার দুর্গম ছোট মদক, বড় মদকে বসবাসকারীদের কথা না হয় বাদই দিলাম।
যাঁদের শীতের মৌসুমে থানচি উপজেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, তাঁরা নিশ্চয়ই প্রত্যক্ষ করেছেন, যাদের বয়স সাত-আট মাস, শীত পার করছে গরম কাপড় ছাড়া। শীতের মৌসুমে যাদের সূর্যের তাপ সব সময় আশীর্বাদ হয়ে আসে।
এ বছর আগাম উদ্যোগের প্রয়োজন আরও বেশি এই জন্য যে এ বছর যারা ছোট পরিসরে শীতের শাকসবজির চাষি এবং দিনমজুর, তারা দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আরও বেশি প্রান্তিকতায় গেছে।
কেননা, এ বছর তারা তাদের উৎপাদিত শাকসবজি যেমন সময়ে বিক্রি করতে পারেনি, তেমনি দিনমজুররাও হরতাল-অবরোধের মতো নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে কাজ পায়নি। শহর অঞ্চলে গিয়ে যারা রিকশা চালায়, তারাও তেমন উপার্জন করতে পারেনি।
তাই গতানুগতিকতার ব্যতিক্রম প্রত্যাশা করছি। চাই আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্যোগের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার। দেশে হাজার হাজার স্থানীয় পর্যায়ে বেসরকারি সংগঠনের উপস্থিতি রয়েছে, যা সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো ইচ্ছা করলে সহজে চাহিদা নিরূপণ করা সম্ভব খুব কম সময়ের মধ্যে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্যোগী ব্যক্তি ও বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্র ফোরামও আগাম বস্ত্র সংগ্রহের উদ্যোগী হয়ে উঠতে পারে।
ঞ্যোহলা মং
পানখাইয়াপাড়া, খাগড়াছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।