ভোরের আলো ফুটতেই কুয়াশাঢাকা সকাল। শীতের আমেজ। বগুড়া জিলা স্কুলের শিশিরভেজা সবুজ ঘাসভরা মাঠে উচ্ছ্বসিত খুদে শিক্ষার্থীদের ঢল। শিশু–কিশোরের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে সেখানে অন্য রকম এক মিলনমেলা। কিশোর আলোর পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিলা স্কুল মাঠে ততক্ষণে জমে উঠেছে ‘কিআনন্দ’।
প্রথমে বেলুন উড়িয়ে ‘কিআনন্দ’ বগুড়া আসরের উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার। ‘তোমার পৃথিবী এবার হবে আরও বড়’ স্লোগানে সকাল নয়টায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের জমজমাট এই বাঁধভাঙা খুশির উৎসব শুরু হয়। পরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দেশের গান পরিবেশন করে। বগুড়ার আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠীর একঝাঁক নৃত্যশিল্পী ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফি করে। এরপর আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠী ‘নানা বর্ণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক দৃষ্টিনন্দন একটি নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে।
শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বজলুল করিম বাহার বলেন, ‘আজকের কিআনন্দ অনুষ্ঠানে বগুড়া জিলা স্কুল মাঠে একটি লাল–সবুজের বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। যে বাংলাদেশ হবে আগামী দিনের তারুণ্য শক্তিতে ভরা, যুবশক্তিতে ভরপুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সম্ভাবনার একটি বাংলাদেশ। আজকের এ লাল–সবুজের বাংলাদেশ কিশোর আলোর সঙ্গে রয়েছে। এরা কখনো মাদক স্পর্শ করবে না, মিথ্যা বলবে না, জঙ্গিবাদে জড়াবে না। এরা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নেবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভিশন বিভাগের প্রধান ও চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবির বকুল। তিনি বলেন, ‘কিশোর আলোর পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় শিশু–কিশোরদের নিয়ে এ অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমরা চাই সৃজনশীল একটি আগামী প্রজন্ম। কিশোর আলো এ প্রজন্মের সঙ্গে রয়েছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. ফয়েজ আহাম্মদ এবং বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুসতাক হাবিব।
জেলা প্রশাসক বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশপ্রেম বুকে লালন ও ধারণ করতে হবে। সুন্দর একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিশু-কিশোরদের নিয়ে শুরু হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রথম থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বয়সভিত্তিক তিনটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে এতে অংশ নেয়। উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে শিশুদের বিচিত্র শখের নানা সংগ্রহ। যেমন খুশি তেমন সাজ পর্বে শিশুরা সেজেছে বিচিত্র সাজে। প্রদর্শিত হচ্ছে সাইকেল কসরত।
লাভেলোর আইসক্রিম জোনে ৯৯ টাকার বিনিময়ে মিলছে শিশু-কিশোরদের জন্য দিনভর যত খুশি তত আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ। প্রথমার বইয়ের দুনিয়া থেকে শিশু-কিশোরেরা পছন্দের বই কিনছে। প্রথম আলোর বিপণন বিভাগের স্টল থেকে শুভেচ্ছামূল্যে সংগ্রহ করছে চাবির রিং, নোট বুক, টি–শার্টসহ নানা শুভেচ্ছা স্মারক।
‘কিআনন্দ’ মঞ্চে চলছে দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেছে গান, নাচ ও নাটক।
সকালের পর্বে কিশোর আলোর পাঠকদের মুখোমুখি অনুষ্ঠান জাদু প্রদর্শন করেন রাজীব বসাক। এ ছাড়া সংগীত পরিবেশন করছে সেরাকণ্ঠের জনপ্রিয় শিল্পী লুইপা, আল আমিন ইবনে কবির আপেল, ক্ষুদে গানরাজের রাফতি ও পায়েল। বিকেলে সংগীত পরিবেশন করবেন কণ্ঠশিল্পী ইমরান, পারভেজ ও জলের গান। দুপুরের পর নানা পর্বে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই।