আমি এখন দর্শকের মেহজাবীন

বিদেশি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা বাবার চাকরিসূত্রে মেহজাবীনের ছেলেবেলা কেটেছে ওমান ও দুবাইতে। ফলে পরিবারের মধ্যে বাংলায় কথা বলা ছাড়া স্বদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। ২০০৮ সালে ও লেভেল পড়ার সময় দেশে ফিরে দেখলেন, স্বদেশ তাঁর অজানা। তখন কে জানত, এই অজানা দেশেই একদিন তাঁকে অনেক মানুষ চিনবে!

খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল। ‘আমি যা কিছুই করি না কেন, বিখ্যাত হতে চেয়েছি,’ তিনি প্রথম আলোকে বলেন। কিন্তু বিষয়টা সহজ ছিল না। প্রথমে জানাই ছিল না কী করবেন। দেশে ফেরার বছরখানেকের মধ্যে পথ খুলে গেল একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। সেই গল্প বললেন: ‘আমার দাদা ও নানাবাড়ি চট্টগ্রামে। বিদেশ থেকে ফিরে চট্টগ্রামে স্থায়ী হলাম। কাজিনরা সব বড় বড়। সমবয়সী কেউ নেই। কোনো বন্ধু নেই। ২০০৯ সালে একদিন পত্রিকায় লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন দেখে রেজিস্ট্রেশন করলাম। তারপর অডিশন এবং সেরা ২৫ জনের একজন হয়ে ঢাকায় চলে এলাম। টানা তিন মাস গ্রুমিং হলো: নাচ, অভিনয়, র‌্যাম্পে হাঁটা, কথা বলাসহ নানা কিছু শিখলাম।’
কিন্তু মেহজাবীনের জন্য এই প্রতিযোগিতা ছিল বিশেষভাবে কঠিন। অন্য প্রতিযোগীরা বেড়ে উঠেছেন স্বদেশেরই আলো–হাওয়ায়, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে; অভিনয়, নাচ কিংবা গানে তাঁদের কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু মেহজাবীনের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। উপরন্তু আজীবন থেকেছেন বিদেশে, পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি মাধ্যমে। বাংলায় লিখতে–পড়তে না জানা ছিল একটা বড় ঘাটতি। সব ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা সফল হয়েছে: সবাইকে ছাড়িয়ে লাক্স–চ্যানেল আইন সুপারস্টার চ্যাম্পিয়নের মুকুট জয় করেছেন।

মেহজাবীন। ছবি: খালেদ সরকার
মেহজাবীন। ছবি: খালেদ সরকার
>মেহজাবীন 
 প্রথম স্কুল: ইন্ডিয়ান স্কুল সোহার, ওমানে। পরে ঢাকায় প্রাইভেটে ও লেভেল এবং এ লেভেল
 বর্তমান পড়াশানা: শান্ত–মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়াশোনা চলছে।
 প্রথম অভিনয়: তুমি থাকো সিন্ধুপাড়ে। নাটক। পরিচালক: ইফতেখার আহমেদ ফাহমি
 সেরা অর্জন: লাক্স সুপারস্টার ২০০৯ সেরা স্বীকৃতি: মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৭
 নিজের চোখে সেরা পাঁচ নাটক: বড় ছেলে, সোনালী ডানার চিল, বুকের বাঁ পাশে, ফেরার পথ নেই, হাতটা দাও না বাড়িয়ে

তারপর?
তারপরের পথও জানা ছিল না। ফিরে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে। একদিন চ্যানেল আই থেকে ফোনে ডাক এল: টিভি নাটকে অভিনয়ের আহ্বান। মেহজাবীন ঢাকায় এসে দাঁড়ালেন ক্যামেরার সামনে। অভিনয় করলেন তুমি থাকো সিন্ধুপাড়ে নামের একটি নাটকের প্রধান নারী চরিত্রে। এই অভিনয়ই বেঁধে দিল তাঁর ভবিষ্যতের পথ। একটার পর একটা নাটকে অভিনয় করে চললেন।
তবে রাতারাতি খ্যাতি এল না; হঠাৎ ঝলমল করে জ্বলে ওঠার মতো কিছু ঘটল না। ২০০৯ থেকে ২০১৮—এই দীর্ঘ সময়ে মেহজাবীন নামের অভিনয়–তারকার আলো উজ্জ্বলতা পেয়েছে ক্রমান্বয়ে। টিভি অভিনেত্রীদের প্রথম সারিতে তাঁর উঠে আসার ঘটনা সাম্প্রতিক: মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৭ সালে। টেলিভিশনে ও অনলাইন মাধ্যমে এখন তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। তাঁর অভিনীত নাটক ইউটিউবে বিপুলভাবে সমাদৃত হচ্ছে। এটা তাঁকে আনন্দিত করে। তিনি বললেন, ‘ইউটিউবে নাটক আপলোড হলে সরাসরি দর্শকের ফিডব্যাক পাওয়া যায়। প্রতিটি লিংকের নিচে মন্তব্য আসে। আমি এখন সরাসরি দর্শকের মেহজাবীন।’
মেহজাবীন প্রতি মাসে অনেক নাটকে অভিনয় করেন। ঈদের আগে ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। তিনি মনে করেন, এখন টিভি নাটকের মান ভালো হচ্ছে।

 হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক প্রথম আলোর সহসম্পাদক