ফিরছেন নওশাবা

অনেক দিন পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। সবশেষ গত ৪ আগস্ট একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের শুটিং করার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে। তারপর অনেক কিছু ঘটে গেছে। নওশাবা আবার কাজে ফিরছেন। গত সোমবার বিকেলে নওশাবা বললেন কেমন আছেন এই সময়। জানালেন তাঁর আগামী কিছু পরিকল্পনাও। সঙ্গে ছিলেন হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক

গত সপ্তাহে কাজী নওশাবা আহমেদ অভিনীত স্বপ্নের ঘর ছবির ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি ভৌতিক। নওশাবা বললেন, ‘আমি ঢাকা অ্যাটাক-এ অভিনয়ের সময় প্রায় একই রকম চরিত্রে অভিনয়ের অফার পাচ্ছিলাম। কিন্তু একটু আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলাম। ওই সময়ই অংশু ভাই (পরিচালক তানিম রহমান অংশু) আমার সঙ্গে স্বপ্নের ঘর ছবির চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেন। এককথায় রাজি হয়ে যাই।’

ছবিতে প্রথম দিকে মেয়েটিকে খুব নেতিবাচকভাবে দেখা যাবে। মেয়েটার হাতে সব সময় একটা মোমবাতি থাকে। কালো জাদু জানে। জাদু করে স্বামীকে সাহায্য করে। একটা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী সে। তারপর? বাকিটা পর্দায় দেখার অনুরোধ করলেন নওশাবা। এমন চরিত্রে ঢোকার জন্য নওশাবার হাতে কোনো ‘ক্লু’ ছিল না। তাঁর জন্য একেবারে আনকোরা চরিত্র।

কাজী নওশাবা আহমেদ। ছবি: কবির হোসেন
কাজী নওশাবা আহমেদ। ছবি: কবির হোসেন

মুক্তির অপেক্ষায় আরও তিন
স্বপ্নের ঘর এই মাসেই মুক্তি পাবে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে আর তিনটি চলচ্চিত্র। এন রাশেদ চৌধুরীর চন্দ্রাবতী কথায় নওশাবা হয়েছেন সীতা। মিজানুর রহমান লাবুর ৯৯ ম্যানশন ছবিতে তিনি প্রকৌশলী। ওয়াহিদ তারেকের আলগা নোঙর ছবিতে শান্ত এতিম মেয়ের চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। প্রতিটি চলচ্চিত্রের নতুন চরিত্র। নতুন নওশাবা। এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন তিনি। সিনেমার গল্প শেষ করার আগে আগে বললেন, ‘আমি অনবরত নিজেকে ভাঙছি। চেষ্টা করেছি। সমস্যা হলো, এক চরিত্রে ঢুকে গেলে হুট করে আরেক চরিত্রে ঢুকতে পারি না। সেটা অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হয়। এ কারণেই আমি বিরতি দিয়ে সিনেমায় অভিনয় করি। আমার মনে হয় দর্শকেরা আমার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো দেখলেই সেটা বুঝবেন।’

কীভাবে কেটেছে এত দিন?
৪ আগস্টের পর অনেক দিন নওশাবা জেলে আটক ছিলেন। ছাড়া পেয়েছেন ঈদের আগের দিন। তারপর খোঁজ পাওয়া যায়নি এই অভিনেত্রীর। নিজের মধ্যে ডুবে ছিলেন। এসব নিয়ে কথা বলব না বলব না করেও নওশাবা বলে ফেলেন, ‘আমি ছাড়া পাওয়ার পর ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ছিলাম। ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। তবে বেশ কয়েকবার পাহাড়ে গিয়েছি। অনেকেই জানেন, আমি পাহাড়ের বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাই। সেখানে উপেন দেবী নামে একটা মেয়েও আছে, তাঁর দায়িত্ব আমি নিয়েছি। তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। সত্যি কথা বলতে, পাহাড়ের শিশুরা আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে তার তুলনা নেই। ওদের এসব বাইরের জগতের অনেক কিছুই স্পর্শ করেনি। আমি ওদের সঙ্গে হেসেছি, খেলেছি, আনন্দ করেছি।’

জানালেন, শুধু এসবই নয়, এই ফাঁকে কয়েকজন বন্ধু মিলে তৈরি করেছেন আলোর খোঁজে নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যেটার শুটিং হয়েছে পাহাড়ে, এই কদিন আগে, প্রবারণা পূর্ণিমা ও পাহাড়িদের ফানুস উৎসবের সময়। এই বন্ধু দলের নাম ‘টুগেদার উই ক্যান’। এই চলচ্চিত্রের পরিকল্পনা ও সৃজনশীল নির্দেশনায় ছিলেন নওশাবা। সংগীত করবেন ইমন চৌধুরী। জানালেন, শিল্পের একটি নতুন মাধ্যমে তাঁর প্রথম চেষ্টা এটি।

সাবধান ফেক আইডি
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় একটি লাইভ ভিডিওতে কথা বলে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়েছিল নওশাবার বিরুদ্ধে। এ মাসেও আদালতে হাজিরার তারিখ আছে। বিষয়টি এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তাধীন রয়েছে। নওশাবা বললেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার পরিবার, অভিনয়শিল্পী সংঘ, সহকর্মী, বন্ধুসহ সবাইকে ধন্যবাদ। তাঁরা আমাকে বুঝেছেন, পাশে থেকেছেন।’

ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি সবাইকে সাবধানও হতে বললেন এই অভিনেত্রী। জানালেন, কে বা কারা ফেসবুকে নওশাবার পূর্ণ নাম ও ছবি দিয়ে কয়েকটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছে। মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত মানুষদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে। এগুলো সঙ্গে কাউকে যুক্ত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। বর্তমানে নওশাবার নিজের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। এ বিষয়ে পরিবার থেকে থানায় জিডিও করা হয়েছে।

আলোর খোঁজে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য
আলোর খোঁজে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৃশ্য

এবার ফেরার পালা...
ফিরতে হবে, হ্যাঁ সবকিছু সামলে নওশাবা কাজে ফিরতে চান। আবারও নিয়মিত দাঁড়াতে চান ক্যামেরার সামনে। বললেন, ‘আমি পুরো জীবনে শুধু অভিনয়টাই শিখেছি। নেশা-পেশা যেটাই বলেন, এটাই আমি জানি। তাই আমি আবারও ফিরব। একজন অভিনেত্রী হয়েই আবার দাঁড়াব সবার সামনে।’
এই উদ্যম নিয়েই হয়তো প্রতিটি দিন নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে আনছেন এই অভিনেত্রী। এখন অপেক্ষা পরিচালকদের। ফিরতে হয় আমাদেরও। ততক্ষণে সন্ধ্যা নামে। অভিনেত্রী নওশাবা আমাদের বিদায় দেন।