বলতে না পারা কথার মুক্তমঞ্চ

সারা পৃথিবীতেই বাক্‌স্বাধীনতা ঝুঁকির মুখে। সে রকম এক সময়ে কথা বলার একটি মুক্তমঞ্চ খুলে দিয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব। যেসব বিষয়ে কোথাও কথা বলা যায় না, সেসব নিয়ে কথা ও আলোচনার উন্মুক্ত মঞ্চ ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হলো তিন দিনের এ সাহিত্য উৎসব। আর এতে যোগ দিচ্ছেন ১৫টি দেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক, অভিনেতা, রাজনীতিক, গবেষক এবং বাংলাদেশের প্রায় দেড় শ লেখক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। তবে এ আয়োজন ঘিরে এবার রয়েছে শঙ্কা। সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বাক্‌স্বাধীনতার প্রশ্নে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আয়োজকেরা।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ফিতা কেটে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮’-এর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী ও নির্মাতা নন্দিতা দাস এবং পুলিৎজার বিজয়ী লেখক এডাম জনসন, উৎসবের তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবার।

ফিতে কেটে ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর
ফিতে কেটে ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি করা হয়। কিন্তু তিনি সেখানে উপস্থিত হতে রাজি হননি। তিনি বলেছিলেন, আমি একজন রাজনীতিবিদ। সাহিত্যিকদের অনুষ্ঠানে আমি কীভাবে যাই। উপস্থিত থাকার শর্ত হিসেবে তিনি বলেন, মঞ্চে কবি জসীমউদ্‌দীন, চিত্রকর জয়নুল আবেদীন এবং অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরীকে উপস্থিত থাকতে হবে। সৃজনশীলতা এবং জ্ঞানের ওপর বঙ্গবন্ধু আস্থা ছিল। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমন।’

কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার মধ্য দিয়ে বাক্‌স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা লিট ফেস্ট সব সময় মুক্তচিন্তা এবং বাক্‌স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ উৎসব বরাবরই নারী, শরণার্থী এবং বাক্‌স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে। এ উৎসবে কথা বলতে কাউকে বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। এটি একটি মুক্তমঞ্চ।’

ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ
ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ

সাদাফ সায্ বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে আমরা বিশ্বের নামী শিল্পী, সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদের নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। এ বছর ৯০টিরও বেশি অধিবেশনে কথা বলবেন ৩০০ জন লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী। যেখানে বিশ্বের সব জায়গায় যখন মুক্ত চিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, তখন এ রকম একটি আয়োজন করতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ আয়োজনে আমরা যেসব বিষয় নিয়ে সরাসরি আলোচনা করব, তা বিশ্বের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়। নারী, হ্যাশট্যাগ মি টু, শরণার্থীসহ নানা বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসবে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা। ঢাকা লিট ফেস্ট একটি শক্তিশালী ধারণা। আমরা মনে করি, আমাদের যা দরকার, তা বলে যাওয়া উচিত।’

আহসান আকবার বলেন, ‘পুলিৎজার, অস্কার, কমনওয়েলথের মতো পুরস্কার বিজয়ীরা এবার এ উৎসবে এসেছেন, যাঁদের নাম বলে শেষ করতে পারব না। বাংলাদেশকে বিশ্বসাহিত্যের বাজারে উপস্থাপন করাই আমাদের লক্ষ্য।’

ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে আলোচনা, চলচ্চিত্র-নাটক প্রদর্শনসহ থাকবে প্রায় ৯০টি অধিবেশন। থাকবে সংগীত ও নৃত্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয় কত্থক নৃত্যের মধ্য দিয়ে। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন মঞ্চে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ, অপরাজিতা মুস্তাফা ও রেওয়াজ পারফরমিং আর্টের শিল্পীরা। তিন দিনের এ উৎসব চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত।