বাংলামোটরে শিশুর লাশ, বাবাকে থানায় নিল পুলিশ

বাংলামোটরের বাড়ির ভেতর থেকে বের করা হচ্ছে পিতা নুরুজ্জামান কাজলকে। ছবি: আবদুস সালাম
বাংলামোটরের বাড়ির ভেতর থেকে বের করা হচ্ছে পিতা নুরুজ্জামান কাজলকে। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর বাংলামোটরের লিংক রোডের খোদেজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের ১৬ নম্বর বাড়ির ভেতর থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশটি শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এর আগে বেলা ১টা ৫০ মিনিটে ওই শিশুর পিতা নুরুজ্জামান কাজলকে আটক করে শাহবাগ থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ বুধবার সকালে ওই বাসায় এক বাবা তাঁর দুই শিশুসন্তানকে ‘জিম্মি’ করে রেখেছেন—এমন সংবাদে বাসাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। কিছুক্ষণ পরে র‍্যাব, পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যেরা ঘটনাস্থলে যায়।

র‍্যাব-২-এর উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকেছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি, শিশুটির বাবা বসে আছেন, তাঁর পাশে একজন হুজুর বসে আছেন। শিশুটিকে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো একটি টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে। শিশুটির বাবাকে কোনো সাহায্য লাগবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কারও সাহায্য লাগবে না। আপনারা কেন এসেছেন? আপনারা চলে যান। বেলা একটার দিকে আমি নিজে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে আমার ছেলেকে দাফন করব।’

নুরুজ্জামান কাজলকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আবদুস সালাম
নুরুজ্জামান কাজলকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আবদুস সালাম

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘ওই বাসায় একটি শিশু মারা গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। শিশুটির বয়স আড়াই থেকে তিন বছর।’ তিনি জানান, শিশুর বাবা এর আগে মাদক গ্রহণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জেলেও পাঠানো হয়।

শিশুটির বাবার নাম নুরুজ্জামান কাজল। কাজলের বাবার নাম মনু মেম্বার। পরিবারের সদস্যেরা জানান, এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে মনু মেম্বারের পরিবারের। কাজলের আচার-আচরণের জন্য পরিবারের সদস্যরা তাঁর ওপর বিরক্ত ছিলেন।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ওই বাসার দোতলায় থাকতেন কাজল। পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তাঁর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাস খানেক আগে তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

বাংলামোটরের বাড়ির ভেতর থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: আবদুস সালাম
বাংলামোটরের বাড়ির ভেতর থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: আবদুস সালাম

স্থানীয় একজন বাসিন্দা আকিল জামান বলেন, কয়েক মাস আগে স্ত্রীকেও মারধর করেন কাজল। প্রতিবেশীরা এসে তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রী চলে গেছেন। বাচ্চা দুটো বাবার সঙ্গে ছিল।

ঘটনা শুনে নুরুজ্জামান কাজলের ভাই নুরুল হুদা উজ্জ্বল ঘটনাস্থলে এসেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কাজল বাসা থেকে বের হয়ে পাশে থাকা মাদ্রাসায় গিয়ে জানান, তাঁর ছোট ছেলে নূর সাফায়েত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। এটা যেন মাইকে ঘোষণা করা হয়। তারপর মাদ্রাসার ছাত্রদের পবিত্র কোরআন খতম দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে চান। এ কথা শোনার পর আবদুল গাফফার নামে একজন খাদেম মাদ্রাসা থেকে তাঁর সঙ্গে যান। এখনো তিনি ভেতরে আটকা আছেন। মাইকে সংবাদ শুনে আমি আসি। ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি। কিন্তু কাজল ঢুকতে দেননি। দরজা আটকে দিয়েছেন। কাজলের সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে সুরায়েত (৪) আছে।’

নুরুল হুদা উজ্জ্বল অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই নুরুজ্জামান কাজল দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলেকে হত্যা করেছেন। তাঁর হাতে রামদা ছিল।