'সাকিব ভাই-মিরাজ সব ফিনিশ করে দিয়েছে'

টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তাইজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তাইজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
>টেস্টে এ বছর বাংলাদেশের সেরা বোলার তিনি। চোটে পড়ে কিছুদিন দলে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। তখন স্পিন আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনিই। সাকিবের শূন্যতা পূরণ সম্ভব নয়, তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ে তাইজুল নিজের কাজটা করেছেন ঠিকঠাক। এ বছর আর টেস্ট নেই, মুমিনুলের মতো তাঁরও আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা নেই। কদিন পর ব্যস্ত হয়ে যাবেন ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বিসিএলে। বিসিএল শুরুর আগে প্রথম আলোকে বছরটা পর্যালোচনা করলেন তাইজুল

১৫ বছর রেকর্ডটা ছিল মোহাম্মদ রফিকের অধিকারে। টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে টেস্টে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ উইকেট ছিল এই বাঁহাতি স্পিনারের। ৭ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে সেটিই এ বছর নিজের করে নিয়েছেন তাইজুল। সুযোগ ছিল বছরের সেরা টেস্ট বোলার হওয়ার। সেটি হয়নি। তবুও যেটা হয়েছে, তাইজুল বলছেন সেটিও কম নয়—

* আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার ব্যস্ততা শেষ। তা বছরটা কেমন কাটল? আর এ বছরে আপনার সেরা বোলিং পারফরম্যান্স কোনটি বলবেন?
তাইজুল ইসলাম: বছর ভালোই কাটল। বলা যায় অনেক ভালো। উইকেট প্রাপ্তি বিবেচনা করলে ক্যারিয়ারের সেরা বছরই বলতে পারেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে ১১ উইকেট আমার সেরা পারফরম্যান্স। উইকেট কিন্তু স্পিন-সহায়ক ছিল না। প্রথম দুই দিন খুব ভালো উইকেট ছিল। তবুও উইকেট পেয়েছি। ওদের দ্রুত অলআউট করে দিয়েছি।

* এক বছরে মোহম্মদ রফিকের ৩৩ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড ভেঙেছেন। এই অর্জনটা কীভাবে দেখেন?
তাইজুল: রফিক ভাই অনেক বড় বোলার। দেশের বাইরের স্পিনারদের ওভাবে চিনতাম না, ছোটবেলায় তাঁকে অনেক অনুসরণ করতাম। তাঁর অ্যাকশন, বোলিং সবই অনুসরণ করার মতো ছিল। তাঁকে টপকে এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়াটা আমার জন্য অবশ্যই বিশেষ কিছু।

* বছরের শেষ টেস্টে তেমন বোলিংয়েরই সুযোগ পেলেন না। এই টেস্টে ভালো করতে পারলে আরও ভালো কিছু অর্জন হতে পারত। মিরপুর টেস্টে ১১ ওভারের বেশি বোলিং করতে পারলেন না। প্রথম ইনিংসে করেছেন মাত্র ১ ওভার। এটা নিয়ে কি একটা আফসোস আছে?
তাইজুল: সাকিব ভাই বা মিরাজ যখন বোলিং করেছে, আমাদের এই দুজনকে খেলাটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের। আমার সুযোগটা তাই কমে গেছে। সাকিব ভাই আর মিরাজই তো ফিনিশ করে দিয়েছে! এখানে খারাপ লাগার কিছু নেই। বরং অনেক খুশি যে দল জিতেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েছি।

* সাকিব-মিরাজ ফিনিশ করে দিয়েছেন বলছেন। আপনিও কি সেই ‘ফিনিশারে’র একজন হতে পারতেন না? যেহেতু এ বছর টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার আপনি।
তাইজুল: ফিনিশ করতে পারতাম না, বিষয়টি তা নয়। দুজনই ধারাবাহিক উইকেট পাচ্ছিল। একজন বোলার যখন টানা উইকেট পেয়ে যাচ্ছে, তাকে তো থামিয়ে দেওয়া যায় না। নাঈমও ভালো বোলিং করেছে। ওকেও আনা হয়নি খুব একটা। যেহেতু দুজন অসাধারণ বোলিং করছে, এখানে দলের পরিকল্পনা, ম্যাচের ফলই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর ডানহাতি, বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাপারও ছিল। সাকিব ভাই রান দিচ্ছিলেন না। তাঁর মেডেন ওভারের সংখ্যাও বেশি দেখবেন। সাকিব ভাই যখন একদিক থেকে চাপ দিচ্ছিলেন, মিরাজ অন্য প্রান্ত থেকে উইকেট তুলে নিচ্ছিল। শেষ টেস্ট নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। সৃষ্টিকর্তা চাইলে এমন বছর সামনে আরও আসবে।

* সাকিব আল হাসান যখন চোটে পড়ে দলে ছিলেন না, তখন স্পিন আক্রমণে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিব ফেরার পরও দুর্দান্ত তাইজুলকে দেখা গেছে। সাকিবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বোলিং করাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়?
তাইজুল: এখানে তাল মেলানোর কিছু নেই। সাকিব ভাই যখন থাকেন, পুরো দল অন্য রকম উজ্জীবিত থাকে। তিনি এমন পর্যায়ে চলে গেছেন, যে দলেই খেলুন তারা ৫০ থেকে ১০০ হয়ে যায়। তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারদের খুব ভালো পড়তে পারেন। সাকিব ভাই না থাকলে আমাকে হয়তো একটু বেশি বোলিং করতে হয়। তিনি থাকলে চাপটা অনেক কমে যায়, আমরা ভালো কিছু করতে পারব, এমন একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে।

* ২০১৮ সালে ৮ টেস্টে বাংলাদেশের স্পিনাররা নিয়েছেন ১১৯ উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনাররা এক পঞ্জিকাবর্ষে এর আগে সর্বোচ্চ ৭৯ উইকেট পেয়েছিলেন ২০১৪ সালে খেলা ৭ টেস্টে। এই সাফল্যের রহস্য কী?
তাইজুল: দলের স্পিনারদের মধ্যে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জাতীয় দলে আসার আগে জাতীয় লিগ, বিসিএলে খেলা হচ্ছে। সেখানে ভালো বোলিং অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের স্পিন কোচ সুনীল যোশির অনেক অবদান। যেহেতু তিনি ভারতীয় দলে দীর্ঘদিন টেস্ট খেলেছেন। অনেক অভিজ্ঞ। স্পিনারদের কার কী দরকার, এটা খুব ভালো বোঝেন। রুয়ান কালপাগে চলে যাওয়ার পর মাঝে এক বছরের মতো আমাদের কোনো স্পিন কোচ ছিল না। নিজেদের মতোই চালিয়ে নিয়েছি। জাতীয় দলে খেললে যোশির পুরো সমর্থনটা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকলে স্থানীয় কোচ সোহেল ইসলাম অনেক সহায়তা করেন।

তাইজুলের সাফল্যে স্পিন কোচ যোশির অনেক অবদান। ছবি: প্রথম আলো
তাইজুলের সাফল্যে স্পিন কোচ যোশির অনেক অবদান। ছবি: প্রথম আলো

* যোশির কোন বিষয়টা আপনাদের ধারাবাহিক ভালো করতে উদ্বুদ্ধ করেছে?
তাইজুল: তিনি খুব ভালো বোঝেন আমাদের। একজন বোলার যখন উইকেট পায় না, তার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক কিংবা টেকনিক্যালি কী কাজ করতে হবে, কী বলতে হবে, সেটি খুব ভালো বোঝেন। কোন লাইন-লেন্থে বোলিং করলে বেশি সফল হওয়া যাবে, খুব ভালো বোঝেন।

* ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর। দেশে যেভাবে ছড়ি ঘোরালেন স্পিনাররা, নিউজিল্যান্ডে সেটির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কন্ডিশন-উইকেট হয়তো হাত বাড়িয়ে দেবে পেসারদের দিকে। এই চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নিচ্ছেন?
তাইজুল: ছন্দ ধরে রাখা বলতে ওখানে ইকোনমি ঠিক রাখতে হবে। যদিও সেটা সহজ হবে না। তবুও চেষ্টা করতে হবে। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে স্পিনাররা সেভাবে বোলিংই করে না। করলেও চতুর্থ-শেষ দিনে গিয়ে। আমাদের প্রথম কাজ হবে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান যত কম দেওয়া যায়। উইকেট পাওয়ার ব্যাপারটা বলা কঠিন। আমাদের দলে ভালো ভালো পেসার আসছে। স্পিনার হিসেবে আমরা চেষ্টা করব তাদের সমর্থন দিতে।

আরও  পড়ুন :-