হাঙ্গেরি যাচ্ছে জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়া

পাবনায় জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেওয়া রাবেয়া-রোকাইয়াকে চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরি নেওয়া হবে। হাঙ্গেরি থেকে ফেরার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অধীনে চিকিৎসাধীন এই যমজ শিশুদের দেশেই অস্ত্রোপচার করার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাবেয়া-রোকাইয়াকে হাঙ্গেরি নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শিশু দুটির চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন। হাঙ্গেরিতে চিকিৎসার জন্য তাঁর দেওয়া অনুদান শিশুদের মা-বাবার হাতে তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাস্তব অর্থেই মানবতার নেত্রী। তিনি চিকৎসক ও রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা-মাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে ওদের চিকিৎসার সাফল্য কামনা করেন।

হাঙ্গেরি যাওয়ার আগে চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুদান শিশুদের মা-বাবার হাতে তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ছবি: আবদুস সালাম
হাঙ্গেরি যাওয়ার আগে চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুদান শিশুদের মা-বাবার হাতে তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ছবি: আবদুস সালাম

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির যৌথ উদ্যোগে রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসা হবে। সেখানে হাঙ্গেরি, জার্মানি ও বাংলাদেশের পাঁচটি দলের ২০ সদস্য কাজ করবেন। তিনি জানান, রাবেয়া-রোকাইয়া যখন ভর্তি হয় বাংলাদেশে জার্মানি ও হাঙ্গেরির প্রতিনিধিদল ছিল। তখন থেকেই ওদের চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় সাংসদের মাধ্যমে শিশু দুটির অবস্থা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। তিনি শিশু দুটির চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ওদের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
দুই বছর সাত মাস বয়সী এ শিশু দুটির বাংলাদেশে এর আগে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে দুবার অস্ত্রোপচার করা হয়। হাঙ্গেরি থেকে ফেরার পর দেশে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ওদের মূল অস্ত্রোপচার হবে।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, রাবেয়া–রোকাইয়ার মস্তিষ্ক আলাদা। কিন্তু ওদের পুরোপুরি আলাদা করার জন্য টিস্যু বাড়াতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু চিকিৎসার জন্য ওদের হাঙ্গেরি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এ ধরনের চিকিৎসায় সফলতার হার ২০ শতাংশের কম। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানান তিনি।

বাবা-মা ও বড় বোনের সঙ্গে হাসি-খুশি রাবেয়া-রোকাইয়া। ছবি: আবদুস সালাম
বাবা-মা ও বড় বোনের সঙ্গে হাসি-খুশি রাবেয়া-রোকাইয়া। ছবি: আবদুস সালাম

হাঙ্গেরিতে রাবেয়া-রোকাইয়াকে তিন থেকে চার মাস থাকতে হতে পারে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে ‘ফর বাংলাদেশ’ নামে হাঙ্গেরিভিত্তিক একটি বাংলাদেশি সংগঠন শিশু দুটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবে।
রাবেয়া-রোকাইয়াসহ ছয়জন আজ রাতে হাঙ্গেরির উদ্দেশে রওনা হবেন। সঙ্গে যাবেন বার্ন ইউনিটের ওদের চিকিৎসক হোসাইন ইমাম। শিশু দুটির বাবা রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাচ্চা দুটির জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, সাংসদ হাবিবে মিল্লাত, ফর বাংলাদেশের হাসনাত মিয়াসহ বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা।