শাহবাগের শিশুপার্ক বন্ধ, আপনি কি জানেন?

আধুনিকায়নের কাজ চলছে, তাই শিশুপার্ক বন্ধ। কিন্তু তা জানেন না অনেকেই। তাঁদের মতো একজন গতকাল ঘুরতে এসে পার্কের ফটকের সামনে শিশুদের ছবি তুলছেন।  আবদুস সালাম
আধুনিকায়নের কাজ চলছে, তাই শিশুপার্ক বন্ধ। কিন্তু তা জানেন না অনেকেই। তাঁদের মতো একজন গতকাল ঘুরতে এসে পার্কের ফটকের সামনে শিশুদের ছবি তুলছেন। আবদুস সালাম
>

• ১৯৭৯ সালে শিশুপার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়
• বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে চালু হয় ১৯৮৩ সালে
• পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে ডিএসসিসি
• ১ জানুয়ারি থেকে পার্ক আধুনিকায়নের কাজ শুরু
• আধুনিকায়নের জন্য শিশুপার্কটি বন্ধ রয়েছে
• পার্কটি বন্ধ থাকার তথ্য জানেন না অনেকে
• দর্শনার্থীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন

আধুনিকায়নের কাজ চলছে শাহবাগের শিশুপার্কের। এ কাজ শেষ হতে লাগবে এক বছর। কিন্তু সে তথ্য জানেন না অনেক দর্শনার্থী। এতে প্রতিদিনই অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, জনসাধারণের হয়রানি বন্ধে পার্কটি বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালানো উচিত।

গতকাল সোমবার বিকেলে গেন্ডারিয়া থেকে স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে শিশুপার্কে এসেছিলেন মো. ওয়াসিম। এসে পার্কটি বন্ধ দেখে হতাশ তিনি। মন খারাপ তাঁর ছোট ছেলেমেয়েদের। পরে তিনি সন্তানদের বন্ধ শিশুপার্কের সামনে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলেন।

ওয়াসিম বলেন, ‘ছোট বাচ্চারা কত আশা নিয়ে এসেছে। রাইডে উঠবে, আনন্দ করবে। এসে দেখি পার্ক বন্ধ। এখন বাচ্চাদের কী বলব? খুব খারাপ লাগছে।’

১৯৭৯ সালে শিশুপার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে চালু হয় ১৯৮৩ সালে। মোট রাইডের সংখ্যা ছিল ১২টি। পার্কটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

গতকাল বিকেলে দেখা যায়, পার্কে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। তবে কিছুক্ষণ পরপরই সেখানে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকেরা আসছেন। পার্ক বন্ধ দেখে অনেকে অবাক হচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। কেউ কেউ বন্ধ পার্কের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে সন্তানদের ছবি তুলছেন। কেউবা পাশের ফুচকা-চটপটির দোকানে যাচ্ছেন। কেউবা সন্তানের মন খারাপ কাটাতে প্লাস্টিকের খেলনা দিচ্ছেন।

গতকাল শিশুপার্কের সামনে দেখা মেলে একটি পরিবারের। নারায়ণগঞ্জে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো শেষে মিরপুরে ফিরছিল পরিবারটি। হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে বাস থেকে পরিবারের সদস্যরা শাহবাগে নেমে পড়েন। উদ্দেশ্য, সঙ্গে থাকা তিন শিশুকে পার্কের রাইড চড়ানো। পার্কটি বন্ধ দেখে কিছুটা হতাশ পরিবারটি। খুদে শিশু জাহিদ আকরাম বলে, ‘পার্ক বন্ধ। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আমি প্লেনে উঠতে চেয়েছিলাম। ভেবেছি, কত্ত মজা করব।’

শিশুপার্কে সন্তানকে নিয়ে আসা অভিভাবক তানিয়া শিকদার বলেন, ‘শিশুদের বেড়াতে নিয়ে আসতে অনেক কিছু ম্যানেজ করতে হয়। সময়ও লাগে। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি খেয়াল করা উচিত। অভিভাবক ও শিশুদের হয়রানি বন্ধে শিশুপার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিনোদন পার্ক বন্ধের বিষয়ে অনেক প্রচারণা দরকার ছিল।’

শিশুপার্কের নিরাপত্তাকর্মী মো. আজাদ বলেন, প্রতিদিনই দূর–দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন। বন্ধ দেখে আবার ফিরে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শিশুপার্ক আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেদিন থেকেই শিশুপার্কটি বন্ধ।

গতকাল বিকেলে দেখা যায়, পার্কের ভেতরে এখন খননযন্ত্র দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। রাইডগুলো এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। কোথাও পার্ক বন্ধের নোটিশ চোখে পড়েনি। তবে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের নকশা দেখা গেছে। সেখানে প্রকল্পের অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়ন করার তথ্য রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘উন্নয়নকাজের জন্য পার্কটি বন্ধ আছে। আপাতত পার্ক বন্ধের নোটিশ নেই। তবে কাগজে টাইপ করে গেটে লাগানো আছে।’ শিগগিরই টেলিভিশন ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পার্ক বন্ধ থাকবে।