কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম আরও বেড়েছে

জেলা প্রশাসনের হুঁশিয়ারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরও কুষ্টিয়ায় গত চার দিনে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি অন্তত চার টাকা বেড়েছে। এ নিয়ে গত এক মাসে চার দফায় এই চালের দাম কেজিতে বাড়ল ১০ টাকা। কুষ্টিয়ার পাইকারি মোকামে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কয়েক দিনের মধ্যে চাল নিয়ে দেশে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জেলা বাজার মনিটরিং কার্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৬ টাকা। আর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। গতকাল শুক্রবারও একই দাম ছিল। এক মাস আগে ছিল ৫০ টাকা।

জেলা বাজার মনিটরিং ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অযৌক্তিকভাবে মিলমালিকেরা চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে মিলমালিকেরা বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তাঁদের দাবি, দেশে ধানের বাজার চড়া। ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই চালের দাম বাড়ছে।

ঈদের আগে কুষ্টিয়ায় মিনিকেট চালের কেজি ছিল ৫৪ টাকা। গত ৩১ আগস্ট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালকলমালিকদের চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরও চালের দাম বাড়ানো হয়। এমনকি গত সোমবার দেশের সবচেয়ে বড় মিল এবং বাংলাদেশ অটোরাইস ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের মিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরও চালের দাম বৃদ্ধি পায়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্মকর্তা এ কে এম শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেনের নেতৃত্বে খাজানগর এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন চালকল পরিদর্শন ও তদারক করা হচ্ছে। এরপরও চালের দাম বেড়েই চলেছে।

কঠোর নজরদারির মধ্যেই কুষ্টিয়ায় চালের দাম কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চালের অব্যাহত দাম বৃদ্ধির বিষয়টি প্রশাসন খুব গুরুত্বসহ দেখছে। চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের চালকলে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। প্রতিদিনই খাজানগরে ম্যাজিস্ট্রেটসহ টিম পাঠানো হচ্ছে।’

জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ধান কেনা ও চাল উৎপাদনের খরচ দেখে হিসাব করে দেখা গেছে, চালের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। যেভাবে মিলমালিকেরা দাম বাড়াচ্ছেন, তা আসলেই বেপরোয়া।

বাংলাদেশ অটোরাইস ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খাজানগর এলাকায় দাদা অটোরাইস মিলের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, আজ (শুক্রবার) যশোর থেকে ১ হাজার ৩৮০ টাকা মণ দরে ধান কেনা হয়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে কেনা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। এত বেশি দামে ধান কেনায় চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

এই সমিতির সভাপতি আবদুস সামাদ বলেন, ‘ধানের দাম তো আমরা বাড়াচ্ছি না। ধানের দাম বাড়ার বিষয়টি সরকারের মনিটরিং করা উচিত। এটা কমানো গেলে চালের দাম এমনিতেই কমে যাবে।’

আরেকটি অটোরাইস মিলের মালিক রফিক সরকার বলেন, চালের দাম আর বাড়বে না। দুই মন্ত্রী ডেকেছেন, আলোচনা হবে। তা ছাড়া খোলা বাজারে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হলে দাম একটু কমে যাবে।