'ফণী' মোকাবিলায় উপকূলে নানা প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় উপকূলের জেলাগুলোয় নানা প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে এই দুর্যোগের সম্ভাব্য আঘাতের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় এলাকার সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীদের দল ও মেডিকেল টিম।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী আগামী শনিবারের আগেই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলের ১৯ জেলায় এর মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে গতকাল বুধবার রাতে জানিয়েছিলেন, ফণীর গতিবেগ এবং পথ যদি ঠিক থাকে, তবে ভারতের ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা ও মোংলায় আঘাত করবে শনিবার সকালে। এটি যশোর হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত প্রবাহিত হবে।

ফণীর সম্ভাব্য আঘাত হানার অঞ্চল সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলার তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। অপর চারটি উপজেলায়ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বিকেলে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে জরুরি সভা হয়। এ সময় তিনি বলেন, জেলার ১৩৭টি সরকারি সাইক্লোন সেন্টার এবং বেসরকারি পর্যায়ের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন কাউন্সিল, কমিউনিটি সেন্টার দুর্যোগকবলিত জনগণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দরবন ও সুন্দরবনসংলগ্ন নদী ও সমুদ্রে থাকা মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। সুন্দরবনে কর্মরত জেলে ও বাওয়ালিদেরও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লোকালয়ে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক বলেন, আশাশুনি ও শ্যামনগরে ৩ হাজার ৬৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা রয়েছেন। এসব উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সতর্ক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা তোলা হয়েছে। তিনি আরও জানা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলায় ৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি ও জানমালের রক্ষায় জনগণকে সতর্ক করার লক্ষ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের মাইকিং। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনাগাজী পৌর বাজার থেকে তোলা। ছবি: আমজাদ হোসাইন, সোনাগাজী (ফেনী)
ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি ও জানমালের রক্ষায় জনগণকে সতর্ক করার লক্ষ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের মাইকিং। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনাগাজী পৌর বাজার থেকে তোলা। ছবি: আমজাদ হোসাইন, সোনাগাজী (ফেনী)

জেলা প্রশাসকের তথ্য অনুযায়ী, তাদের হাতে পর্যাপ্ত ওষুধ খাবার স্যালাইন মজুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জলযান ও স্থলযান, শুকনো থাবার এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনায় ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, বিজিবি, আনসার ভিডিপি এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, জানমালের পাশাপাশি গবাদিপশুর জীবন রক্ষায় উঁচু জায়গায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্কতা প্রচারের জন্য পাড়ায় পাড়ায় মসজিদের মাইক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা সদর এবং সব উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলায় ১১৬ মেট্রিক টন চাল, ৩ হাজার ২০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা, ১১৭ বান্ডিল ঢেউটিন মজুত রয়েছে।

ফণী মোকাবিলায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। এরপর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সব নৌপথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরগুনা ও আমতলী থেকে ঢাকাগামী চলাচলকারী লঞ্চগুলোকেও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্দর ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বরগুনা নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল কার্যালয়ের ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আপাতত অভ্যন্তরীণ নৌপথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিকেলে দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

ফণীর প্রভাবে পরবর্তী করণীয় ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি। প্রস্তুত রয়েছে ৬৬টি মেডিকেল টিম।

গতকাল সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এ সভার আয়োজন করে।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পালের সভাপতিত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ, রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও সিপিডির কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে মেঘনা উপকূলবর্তী এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও নৌচলাচল বন্ধ করা হয়েছে। আজ বিকেল থেকে রেড ক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা চরগুলোর মানুষ ও গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনাবেন।

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ৬৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল, ২ হাজার ৫০০ বস্তা বিস্কুট ও নগদ ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।