কংক্রিটের শহরে নগর কৃষি

ঢাকা, পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল ও দূষিত শহর। কংক্রিটের এ বনে হারিয়ে গেছে সবুজ। এ শহর শুধু মানুষের।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ শিহাব ও মাহফুজ মুনতাসির এবং তাঁদের বড় ভাই কামরুল হাসান এ শহরটিকে দিতে চাচ্ছেন একটি সবুজের রূপ। তাঁদের উদ্যোগের নাম নগর কৃষি।

উদ্যোগটা খুবই সোজাসাপ্টা। নগর কৃষি নগরের মানুষকে কৃষিমুখী করতে চায়। গাছগুলো কেটে যেখানে একের পর এক দালান উঠছে, সেই দালানের ওপর আবার প্রতিস্থাপন করতে চায় গাছ, শিশুদের একাত্ম করতে চায় প্রকৃতির সঙ্গে।

শিহাব ও মাহফুজ যখন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, ঠিক করলেন অন্য সবার মতো চাকরির পেছনে না ছুটে এমন কিছু করবেন, যেন বিদ্যাটা কাজে লাগে আবার অর্থও উপার্জন হয়। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল শহরের মানুষদের জৈব খাদ্য সরবরাহ করবেন।

জায়গা দেন একজন বাড়িওয়ালা তাঁর বাড়ির ছাদে। ব্যস, শুরু হয়ে যায় দুই বন্ধুর চাষবাস। কিন্তু পরিকল্পনাটা যেহেতু ছিল জৈব খাদ্য উৎপাদনের, তাই একটা বড় খরচ লেগে যায় অবকাঠামো নির্মাণে। তখন তাঁরা সাহায্য চান বড় ভাই কামরুল হাসানের কাছে। কামরুল কাজ করতেন একটি নামী এনজিওতে। তিনি দেখলেন, পরিকল্পনা মন্দ নয়, তবে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। তাই তাঁরা খাদ্য উৎপাদন বাদ দিয়ে শুরু করেন বাগান নির্মাণ।

এখন বাগান নির্মাণই নগর কৃষির মূল ব্যবসা। শহরের মানুষের কাছে তাঁরা বাগান তৈরির সব সরঞ্জাম সরবরাহ করেন। প্রয়োজনে বাগান করে দিয়ে আসেন। মাঝেমধ্যে চাইলে বাগান রক্ষণাবেক্ষণের মানুষও পাঠান আর প্রশিক্ষণ তো আছেই। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে সবুজের পথে হাঁটা অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় তিন লাখ টাকার মুনাফা হয়েছে। এখন নিকেতনে অফিস তাঁদের। সেখানে কাজ করছেন জনা পনেরো কর্মচারী।

নগর কৃষির তিন উদ্যোক্তা। (বাঁ থেকে) মাহফুজ মুনতাসির, কামরুল হাসান ও আবু ইউসুফ। ছবি: প্রথম আলো
নগর কৃষির তিন উদ্যোক্তা। (বাঁ থেকে) মাহফুজ মুনতাসির, কামরুল হাসান ও আবু ইউসুফ। ছবি: প্রথম আলো

অনেকেই ছাদে বাগান করছেন, বারান্দা, ঘরের কোণ সাজাচ্ছেন সবুজ দিয়ে। অফিসগুলো চাইছে তাদের অন্দর যতটুকু সম্ভব সবুজাভ রাখতে। তাই গাছ, মাটি, সার, মালি, এটা-সেটা—সবকিছুর জন্যই বারবার ডাক পড়ছে নগর কৃষির।

তা ছাড়া আগামী প্রজন্মকে সবুজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে স্কুলগুলোতে তো বটেই, নিজেদের ছাদেও তাঁরা নিয়মিত আয়োজন করেন খুদে কৃষকদের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষার। এতে প্রকৃতিকেও আপন করে নিতে শেখে শিশুরা।

এই তিন তরুণ স্বপ্ন দেখেন, একদিন এই শহরের বাড়িগুলো ভরে যাবে সবুজের সমারোহে। নান্দনিক সবুজে সেজে উঠবে পথঘাট। মুক্ত বাতাসের শ্বাস নেবেন নাগরিকেরা, সেই প্রাণ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে তাঁরা এগিয়ে যেতে চান আরও অনেক দূর।

সম্প্রতি সেরা কৃষি উদ্যোগ (প্রতিষ্ঠান) ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন নগর কৃষি সংগঠনের এই উদ্যোক্তারা।