ভূমিকম্পের সময় কী করে বাঁচবেন?

বিল্ডিং কোড মেনে দালান নির্মাণ করলে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে রক্ষ পাওয়া সম্ভব। ছবি: অধুনা
বিল্ডিং কোড মেনে দালান নির্মাণ করলে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে রক্ষ পাওয়া সম্ভব। ছবি: অধুনা

ভূপৃষ্ঠে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝাঁকুনি! কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। ভূপৃষ্ঠের এ ঝাঁকুনি সম্প্রতি দেশে ঘন ঘন অনুভূত হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। ভূমিকম্পে বাংলাদেশের ঝুঁকির অবস্থান জানতে চাইলে বুয়েট-জাপান ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার প্রিভেনশন অ্যান্ড আরবান সেফটির পরিচালক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী বলেন, ‘এ অঞ্চলে সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৩০ সালে। তার আগে কিন্তু অনেকবার বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল। আর সাম্প্রতিক যে ভূমিকম্পগুলো হচ্ছে, তা এশিয়ান ও ইন্ডিয়ান প্লেটের ধাক্কায়। ফলে এ অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরে চাপ জমা হচ্ছে। চাপ জমতে জমতে একসময় তা আর ধরে রাখা যাবে না। তাই আমাদের দেশে কিংবা আশপাশে বড় ধরনের ভূকম্পন এক বা একাধিকবার হওয়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে।’
ভূমিকম্পে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা (বিল্ডিং কোড) মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ভূমিকম্পে করণীয়র ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রসের গাইডলাইন অনুসরণ করা যেতে পারে বলে মনে করেন তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী।
ভূমিকম্পের আগে যা করতে হবে
* বাড়ি বা কর্মস্থলের ভেতরে ও বাইরে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করুন, যেন ভূমিকম্পের সময় ভাবতে না হয় কোথায় আশ্রয় নেবেন। লক্ষ রাখতে হবে, সে স্থানের আশপাশে যেন উঁচু কোনো ফার্নিচার বা গায়ে পড়ার মতো জিনিস না থাকে।
* অন্ধকারে দেখার জন্য হাতের কাছে টর্চ রাখুন।
* দেয়ালে ঝোলানো ছবি, আয়না ইত্যাদি বিছানা থেকে দূরে রাখুন।

* গ্যাস ও বিদ্যুচ্চালিত যন্ত্রপাতি নিরাপদ রাখুন। এগুলোর চাবি কোথায় আছে এবং কীভাবে বন্ধ করতে হয়, তা শিখে নিন।
* মাঝেমধ্যে ভূমিকম্প ও জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মহড়া দিন, যাতে সবাই আয়ত্ত করতে পারে।
* শুকনা খাবার ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুন।

ভূমিকম্পের সময় বাড়ির ভেতর থাকলে
* ড্রপ, কাভার ও হোল্ড–অন পদ্ধতিতে মেঝেতে বসে পড়ুন, কোনো মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং কিছুক্ষণ বসে থাকুন। হেলমেট পরে বা হাত দিয়ে ঢেকে মাথাকে আঘাত থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করুন।
* বিছানায় থাকলে মাথা বাঁচাতে বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতরের দিকের মজবুত দেয়ালের কাছে বসে আশ্রয় নিতে পারেন।
* বাড়ির বাইরের দিকের দেয়াল, কাচের জানালা বিপজ্জনক। এগুলো থেকে দূরে থাকুন।
* বহুতল ভবনের ওপরের দিকে অবস্থান করলে ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকাই ভালো।
* ভূকম্পন থেমে গেলে বের হয়ে আসুন।
* নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। ধীরেসুস্থে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন।

বাড়ির বাইরে থাকলে
* খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতল ভবনের প্রান্তভাগের নিচে বা খুব কাছে, পাহাড়-পর্বতের নিচে কোনোভাবেই দাঁড়াবেন না। ওপর থেকে খণ্ড পড়ে আহত হতে পারেন।
* লাইটপোস্ট, বিল্ডিং, ভারী গাছ বা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে দাঁড়াবেন না।
* রাস্তায় থাকলে ছোটাছুটি করবেন না। চলন্ত গাড়িতে থাকলে গাড়ি থামিয়ে খোলা জায়গায় পার্ক করে গাড়ির ভেতরেই আশ্রয় নিন।
* কখনোই ব্রিজ, ফ্লাইওভারে থামবেন না। বহুতল ভবন কিংবা বিপজ্জনক স্থাপনা থেকে দূরে গাড়ি থামান।

ভূমিকম্পের পরে
* ভূমিকম্প শেষ হলেও আরও কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। প্রায়ই পরপর কয়েকবার কম্পন হয়। কম্পন থেমে গেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর বের হোন। ওপর থেকে ঝুলন্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষণ পরও পড়তে পারে।
* নিজে আহত কি না পরীক্ষা করুন, অন্যকে সাহায্য করুন। বাড়িঘরের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করুন। নিরাপদ না হলে সবাইকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যান।
* গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন।
* কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন সুইচ বা ফিউজ বন্ধ করে দিন। ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।
* ব্যাটারিচালিত রেডিও রাখুন যেন প্রয়োজনীয় খবর শোনা যায়। সঙ্গে মুটোফোনও রাখবেন।
* আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখুন। ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর রাখুন।

ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লে
* আগুন জ্বালাবেন না। বাড়িতে গ্যাসের লাইন লিক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
* ধুলাবালুর মধ্যে পড়লে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিন।
* ধীরে নড়াচড়া করবেন। বাঁচার আশা ছাড়বেন না। উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকবেন।
গ্রন্থনা: এস এম নজিবুল্লাহ চৌধুরী