ছাদেও হোক সবুজের ঠিকানা

গ্রিন ক্লাবের এক সদস্যের ছাদবাগানের একাংশ। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
গ্রিন ক্লাবের এক সদস্যের ছাদবাগানের একাংশ। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’—কিন্তু ইট-পাথরের এই শহরে গাছ লাগানোর জায়গাইবা কতটা আছে? তারপরও যারা পরিবেশ নিয়ে ভাবেন, গাছ ভালোবাসেন তারা কিন্তু বসে নেই। যেমন বসে নেই রাজধানীর কয়েকজন তরুণের হাতে গড়া ‘গ্রিন ক্লাব’ নামের সংগঠন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যের বাড়ির ছাদ ও বারান্দায় রয়েছে বাগান। এসব বাগানে নানা জাতের ফুল, ফল, ঔষধী, শাক-সবজি ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ।

গত বছরের আগস্টে ফেসবুকের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে গ্রিন ক্লাব। বর্তমানে সংগঠনের ফেসবুক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। এঁদের সবাই কোনো না কোনোভাবে বাগানের সঙ্গে জড়িত। আজ শুক্রবার ক্লাবের অন্যতম কার্যকরী সদস্য জাহিদুর রহমানের ছাদবাগানে বসে কথা হলো সংগঠনটির শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে।

রামপুরার বনশ্রীতে জাহিদুর রহমানের নিজেদের বাড়ি। এই বাড়িতেই তাঁর বাবা ছাদ বাগান করেছিলেন। সেই বাগানকে আরও সমৃদ্ধ ও প্রসারিত করেছেন জাহিদুর। ছয় তলা ভবনের ওপরে ডুপ্লেক্স ছাদ। নিজের অংশটা ক্যাফের মতো করে সাজানো। ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা, দোলনা আছে। বসার জায়গাটিকে ঘিরে নানা ধরনের গাছ। বেশির ভাগই ফুল। উন্মুক্ত সিঁড়ি দিয়ে একটু ওপরে উঠেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। এই অংশে রয়েছে প্রধানত ফলের গাছ। আমাদের পরিচিত ফলের গাছের পাশাপাশি আছে আলু বোখারা, কাশ্মীরি আপেল কুল, মীরাক্কেল, চেন্নাই আঙুর, মিসরীয় ডুমুর, তেজপাতা, লোকাম, লোকাট, রামবুটান, কাঠলিচু ও ড্রাগন ফল।

এই ছাদ বাগানে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফলের গাছ। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
এই ছাদ বাগানে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফলের গাছ। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

কম-বেশি গ্রিন ক্লাবের সব সদস্যের ছাদ বাগান আছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অনিক ইসলাম জানান, ‘ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করতেই আমরা এই সংগঠন গড়ে তুলি।’ তিনি আরও জানান, ‘যারা বাগান করেন বা করতে চান তাদের আমরা প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিই। শুধু ফেসবুক গ্রুপের মধ্যেই নয়, কয়েক মাস পরপর মতবিনিময় সভার মাধ্যমে আমরা গাছ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করি।’ গ্রিন ক্লাব এই সভায় আগ্রহীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, চারা ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করে থাকে। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ বাগানপ্রেমীদের বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতা করে থাকে ক্লাবের সদস্যরা।

দৃষ্টিনন্দন বাগানে এসে অনেকই ছবি তোলেন। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
দৃষ্টিনন্দন বাগানে এসে অনেকই ছবি তোলেন। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

সংগঠনের নবীন সদস্য পুরান ঢাকার বাসিন্দা তানিয়া ইয়াসমিন বললেন, ‘সবুজের প্রতি ভালোবাসা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। আমি চাই আমাদের দেখে অন্যেরাও গাছকে ভালোবাসতে আগ্রহী হোক।’ লালবাগের রাশিদা হকের ভাষ্য, ‘মানুষের মধ্যে বাগান করার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখন আবাসিক ভবন ছাড়াও অফিস ভবনও সবুজময় করার চেষ্টা চোখে পড়ে।’

ডুপ্লেক্স ছাদবাগানের একাংশ। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
ডুপ্লেক্স ছাদবাগানের একাংশ। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

গ্রিন ক্লাবের রয়েছে নিজস্ব অনলাইন নার্সারি। ‘সবুজ ঢাকা নার্সারি’ নামের এই অনলাইন শপের মাধ্যমে কম দামে ঘরে বসেই পাওয়া যাবে চারা, সার, বীজ, মাটি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। এই নার্সারি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনিক জানান, ‘অনলাইনে বাগান-সংক্রান্ত পণ্য কিনতে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হন। এক গাছের কথা বলে অন্য গাছ কুরিয়ার করা হয়। এই বিড়ম্বনা থেকে লোকজনকে বাঁচাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’

গ্রিন ক্লাবের (বাঁয়ে) জাহিদুর রহমান, তানিয়া ইয়াসমিন, রাশিদা হক ও অনিক ইসলাম। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
গ্রিন ক্লাবের (বাঁয়ে) জাহিদুর রহমান, তানিয়া ইয়াসমিন, রাশিদা হক ও অনিক ইসলাম। বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: আবদুস সালাম