'রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন মিন্নি'

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকার কথা তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি স্বীকার করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন। মামলার ৩ নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীকে (২০) গ্রেপ্তারের পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং মিন্নির কথা থেকে পাওয়া সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে এ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের মিটিং করেছেন হত্যাকারীদের সঙ্গে। মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথন হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দু-একটি গণমাধ্যম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করছে, অভিযোগ করে এসপি মারুফ হোসেন বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

এর আগে এই হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গত মঙ্গলবার ১৩ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি মারুফ হোসেন। ছবি: প্রথম আলো
বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি মারুফ হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি কোনো মাদকের কারণে ঘটেনি। ঘটেছে ব্যক্তিগত জিঘাংসার কারণে। মাদক বা অন্য কোনো ইস্যুর কথা উঠলে মামলাটির ফোকাস ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এ মামলায় বাদী যাদের হত্যাকারী দাবি করেছেন, আমরা তাদের প্রায় সবাইকেই ধরেছি এবং কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না। এ পর্যন্ত আমরা এজাহারভুক্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।’

এ মামলায় নয়ন বন্ডদের যাঁরা প্রশ্রয় দিয়েছেন, তাঁদের কী হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি মারুফ হোসেন বলেন, ‘যাদেরই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।’ পুলিশ কোনো রাজনৈতিক চাপের মধ্যে আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কোনো চাপের মধ্যে নেই।’

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার এই হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও নিহত ব্যক্তির স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গতকাল বুধবার আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।