বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করান তাঁরা

টিএসসিতে বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং চলছে। ঢাকা, ২৮ জুন। ছবি: সংগৃহীত
টিএসসিতে বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং চলছে। ঢাকা, ২৮ জুন। ছবি: সংগৃহীত

‘শিক্ষা কখনো বাণিজ্য নয়’—এই মন্ত্রকে পাথেয় করে একদল তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে কলেজ শিক্ষার্থীদের এই কোচিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আজ সোমবার বিকেলে মধুর ক্যানটিনে বসে এ বিষয়ে কথা হলো ‘খাতা-কলম’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপসম্পাদক মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে।

২০১৩ সালে ‘খাতা-কলম’ যাত্রা শুরু করে। সে সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এ এস আর সিবগাতুল্লাহ, মো. আলমগীর হোসেন ও মীর হেলাল হোসেন, বাংলা কলেজের সোলাইমান বিশ্বাস ও মেহেদি হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাহাত ইসলাম, এনআইএসটির ফারজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহীনূর রহমানসহ আরও কয়েকজন মিলে একটি সাহিত্য পত্রিকা করার কথা ভাবেন। ছয় মাস নিজেরা চাঁদা তুলে একটি তহবিলও গঠন করা হয়। ২০১৩ সালের শেষের দিকে বের হয় মাসিক ‘খাতা-কলম’-এর প্রথম সংখ্যা। সেই পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করেই পরবর্তী সময়ে একই নামের সংগঠন গড়ে ওঠে। পত্রিকাটি অনিয়মিত হলেও, সংগঠনের কাজ থেমে নেই।

সংগঠনের নানা শিক্ষামূলক কাজের অংশ হিসেবে গত ২১ জুন থেকে খাতা-কলম বিনা মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করানো শুরু করেছে। আলমগীর বললেন, ‘আমরা অভিজ্ঞতা থেকে জানি, বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারগুলোতে খোলামেলা আলোচনা হয় না। খরচও বেশি। এসব কথা মাথায় রেখেই আমরা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এই কোচিং সেবা দেওয়া শুরু করেছি।’

প্রতি শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় টিএসসির এক কোণের মেঝেতে ১০ থেকে ২০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে নিয়ে বসে ক্লাস। চলে কমপক্ষে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ছাড়াও এখানে ক্লাস নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

ফোনে কথা হলো খাতা-কলমের সম্পাদক সিবগাতউল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা শনিবারে ক্লাস নিতে চাই। তবে সে জন্য আরও শিক্ষকের প্রয়োজন। আপাতত আমরা বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর জোর দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক এমন যে কেউ নিঃশর্তে আমাদের এখানে যোগ দিতে পারেন। শিক্ষার্থীদের পড়াতে আগ্রহীরাও যোগাযোগ করতে পারেন।’

খাতা-কলমের কর্মীদের চাওয়া একটিই- এই কোচিং সেন্টারে পড়ে কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন, সেও যেন অন্যদের দিকে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একজন মো. মেহেদি হাসান। মাগুরার শ্রীপুর সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন মেহেদি। ফল প্রকাশিত হবে ১৭ জুলাই। তিনি ঢাকার একটি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে পড়ছেন। পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন ‘খাতা-কলমে’র কোচিংয়ে।

মেহেদি বলেন, ‘প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে দায়সারা পড়ালেখা হয়। সেখানে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য। খোলামেলা আলোচনার সুযোগ নেই সেখানে। খাতা-কলমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এখন আমার পড়ালেখায় উন্নতি স্পষ্ট। এই কোচিং সেন্টারে মন খুলে কথা বলা যায়, প্রশ্ন করা যায়। বড় ভাইয়েরাও ভালো করে বুঝিয়ে দেন।’

সংগঠনটিকে অরাজনৈতিক রাখার ব্যাপারে এর নীতিনির্ধারকেরা বদ্ধপরিকর। উপসম্পাদক আলমগীর বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতার প্রস্তাব আসে। তবে আমরা তা গ্রহণ করি না।’ কোনো লাভের আশা না করে কেউ যদি কোনো সহযোগিতা করতে চান, তাহলে তা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সম্পাদক সিবগাতউল্লাহ।

শুরু থেকেই নানা সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজ করছে খাতা-কলম। ২০১৪ সালে তারা প্রকাশ করে মাত্র ৫০ টাকা মূল্যের ইংরেজি ব্যাকরণ বই ‘ইংলিশ একাডেমি’। ২০১৬ সালে মনীষীদের বিভিন্ন উক্তি নিয়ে ‘বাণী-স্ফুলিঙ্গ’ নামে একটি সংকলনও বের করা হয়। বৃক্ষরোপণ, মাছের পোনা অবমুক্ত করা, বায়ুদূষণের কথা মাথায় রেখে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দুস্থ লোকজনের মাঝে খাবার ও পোশাক বিতরণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে খাতা-কলম। এই সংগঠনের আছে নিজস্ব ‘ছাত্রকল্যাণ তহবিল’। এই তহবিলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা হয়েছে।