ভাঙছে চেঙ্গী, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

খাগড়াছড়ির যুবরাজ কারবারিপাড়ায় চেঙ্গী নদীর ভাঙন দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা l প্রথম আলো
খাগড়াছড়ির যুবরাজ কারবারিপাড়ায় চেঙ্গী নদীর ভাঙন দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা l প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের পেরাছড়া ইউনিয়নের যুবরাজ কারবারিপাড়া চেঙ্গী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ পড়ার ৪০টি পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে নদীভাঙনের আতঙ্ক নিয়ে। ইতিমধ্যে পড়ার বেশ কিছু কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ধসে পড়েছে সাতটি বসতভিটার অংশবিশেষ।
খাগড়াছড়ি সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে যুবরাজ কারবারিপাড়ার অবস্থান। সম্প্রতি ওই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত একটি বাড়ির টিন খুলে নিচ্ছিলেন গৃহকর্তা জীবন পর্ব চাকমা। ঘরটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে এমন আশঙ্কায় ঘরের বাসিন্দারা সেখানে থাকছেন না বলে তিনি জানান। এই বাড়িটির মতো প্রায় সাতটি বাড়ির নানা অংশ ইতিমধ্যে নদীরগর্ভে ধসে পড়েছে।
জীবন পর্ব চাকমা বলেন, ‘আমার ঘরের এক অংশ নদীতে ধসে পড়েছে। এখন এক হাতেরও কম দূরত্বে আছে ভাঙন। যেকোনো সময় পুরো ঘরটাই ভেঙে পড়বে। তাই ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তবে আমাদের কোনো থাকার জায়গা নেই। আপাতত আত্মীয়ের বাড়িতে উঠতে হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ব।’
পাড়ার বাসিন্দা ও পেরাছড়া উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক কমলা রঞ্জন চাকমা বলেন, প্রতিবছরই বর্ষায় চেঙ্গী ওই এলাকা ভাঙে। স্থায়ী বাঁধ না দিলে বিশাল এলাকা নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে।
জীবন পর্ব চাকমার মতো আশঙ্কায় দিন কাটছে কনক বরণ চাকমা, সোনাবি চাকমা ও প্রদীপ শেখর চাকমার। তাঁরা নদীভাঙন রোধে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
পেরাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সঞ্জিব ত্রিপুরা বলেন, যুবরাজপাড়া নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এখন প্রয়োজন নদীর পাড় ভাঙনরোধে উদ্যোগ নেওয়া ও ভাঙনের সম্মুখীন পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তবে ইউনিয়ন পরিষদের এমন ক্ষমতা নেই, যা পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসন করার।
এদিকে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ভাঙনকবলিত ২২ এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে। তবে এই ২২টি এলাকার মধ্যে যুবরাজ কারবারিপাড়া পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংস্থার সার্ভেয়ার পদে কর্মরত নিকেল চাকমা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খাগড়াছড়ি কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জেলার চেঙ্গী নদী ও মাইনি নদীর ২২টি পয়েন্টের ভাঙন চিহ্নিত করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে ২২টি পয়েন্টের ভাঙন চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে যুবরাজপাড়া অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না আমার জানা নেই। যদি অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে সাংসদের সুপারিশ নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করব।’