ভাওয়ালে পাহাড়ি শিলা কচ্ছপ

সবচেয়ে বড় পাহাড়ি শিলা কচ্ছপটির ওজন ২৮ কেজি। হ্যাঁ, ৯ বছর বয়সী একটি শিশুর সমান ওজন তার। আদি বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে হলেও এখন তাদের সাতজনের পরিবারটি থাকে গাজীপুর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে। সেখানে তাদের পরিবারে আরও ৪৪টি নতুন মুখ যোগ হয়েছে।

মিয়ানমার ও ভারতের পর বিশ্বে তৃতীয়বারের মতো ওই মহাবিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপের কৃত্রিম প্রজনন হলো বাংলাদেশে। প্রজাতি হিসেবে ৩০ কোটি বছর কাটানোর পর তারা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। কৃত্রিম প্রজনন পৃথিবীতে তাদের টিকে থাকার সময়কাল বাড়িয়ে দিল। আরও তিনটি বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ আছে এখানে। সেগুলো হলো আরাকান পাহাড়ি কচ্ছপ, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ ও দিবা কচ্ছপ। এদেরও কৃত্রিমভাবে বংশবিস্তারের চেষ্টা চলছে।

গাজীপুরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা কচ্ছপ সংরক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, পাহাড়ি শিলা কচ্ছপের ২টি বাবা ও ৫টি মা কচ্ছপ আর ৪৪ সন্তান বেশ আদর–যত্নেই আছে। দুপুরের প্রখর রোদে শণের ঘরে জবুথবু হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। দুপুরের খাবার হিসেবে সবজি কেটে সামনে দেওয়ার পর ঘণ্টাখানেক ধরে তা খেল। তারপর ডেরায় ফিরে আলসে ঘুম। সন্তানগুলো অবশ্য আছে আরও বেশি যত্নে। নরম ও তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে তাদের। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে শিকারিদের কবল থেকে বিলুপ্তপ্রায় এই পাহাড়ি শিলা কচ্ছপ উদ্ধার করে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রজননকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক ছবি।  মাকসুদা আজীজ
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিকারিদের কবল থেকে বিলুপ্তপ্রায় এই পাহাড়ি শিলা কচ্ছপ উদ্ধার করে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রজননকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক ছবি। মাকসুদা আজীজ

প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ৩০ প্রজাতির কচ্ছপের মধ্যে বেশির ভাগই বিপন্ন অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ওই চারটি প্রজাতির অবস্থা সবচেয়ে খরাপ। এই কেন্দ্রে এদের কৃত্রিম প্রজননের মধ্য দিয়ে প্রজাতি হিসেবে বাংলাদেশে এদের টিকে থাকার একটি সুযোগ তৈরি হলো।’

চার প্রজাতির মোট ১৬টি বড় কচ্ছপ রয়েছে এই সংরক্ষণকেন্দ্রে। বন বিভাগের সঙ্গে এ কাজে যুক্ত আছে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। সহযোগিতা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিউচার ফর নেচার, টার্টেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স, আইইউসিএন–এসএসসি। সংস্থাগুলোর বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা ২০১৭ সাল থেকে ওই কেন্দ্রটি পরিচালনা করছেন। তাঁদের পরিকল্পনা আছে ওই কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কচ্ছপের বাচ্চাগুলোকে সামনের বছর তাদের আদি বসতি পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো একটি নিরাপদ পাহাড়ি এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হবে। 

ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের গবেষক শাহরিয়ার সিজার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রজননকেন্দ্রে ৪৪টি কাছিমের বাচ্চাই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছে। এই কেন্দ্রের ভূমি পাহাড়ের মতো উঁচু–নিচু, ঘন বন ও পাশে জলাভূমি থাকায় তারা এখানে তাদের টিকে থাকার পরিবেশ পাচ্ছে।’

ওই চার প্রজাতির কাছিমই বাংলাদেশে অনেক বছর ধরে দেখা যাচ্ছিল না। ২০১২–১৩ সালের মধ্যে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের গবেষকেরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাঙ্গু নদের তীরবর্তী এলাকায় তাদের খুঁজে পান। এদের কয়েকটি পাওয়া যায় স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসীর বাসায় বন্দী অবস্থায়। বন বিভাগ ও সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে তাদের মুক্ত করেন। ২০১৭ সালে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে স্থাপন করা কচ্ছপ সংরক্ষণকেন্দ্রে এনে এদের রাখা হয়।